দৈনিক শিক্ষাডটকম, গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নিয়োগ-বাণিজ্যের টাকা গণনার একটি ভিডিয়ো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ‘ভালোবাসি ধর্মপুর’ নামের একটি আইডিতে ভিডিয়োটি গত বুধবার আপলোড করা হয়। ভিডিয়োতে দেখা যায়, টাকা গুনে নিচ্ছেন ধর্মপুর পিএন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ইয়াদ আলী।
প্রতিবাদ জানিয়ে ইয়াদ আলী তার একটি বক্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করেন। তিনি দাবি করেন, মরহুম প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহিল মাহমুদের (বিদ্যুৎ) হাতে বিদ্যালয়ের টাকা গচ্ছিত ছিল। তাঁর ছোট ভাই মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (সুমন) বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রায় সব শিক্ষকের উপস্থিতিতে টাকা গণনা করে জমা দেন। সাক্ষী হিসেবে সুমন ভিডিওটি ধারণ করেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে মরহুম প্রধান শিক্ষকের ভাতিজা মো. রাকিবুল আলম রানাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ‘ভালোবাসি ধর্মপুর গং’ তাঁকে পদত্যাগসহ বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে। তবে তিনি স্বচ্ছ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দানে বদ্ধপরিকর।
প্রয়াত মরহুম প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহিল মাহমুদের ছোট ভাই দেওয়ান মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ সুমন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের টাকা আমার বড় ভাইয়ের কাছে আছে। মারা যাওয়ার পরে তাঁরা দাবি করলে তাঁদের ৮ লাখ টাকা দিই। বিষয়টির প্রমাণ রাখতে ভিডিওটা করি। ভিডিওটা আপলোড করতে কাউকে বলিনি। তবে ভালোবাসি ধর্মপুর আইডির লোকজন দেখতে চাওয়ায় তাঁদের ভিডিওটা দিয়েছিলাম।’
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আমিন হোসেন বলেন, ‘আগের হেডমাস্টার আব্দুল্লাহিল মাহমুদ বিদ্যুৎ স্যার বিভিন্ন পদে তিনজনকে নিয়োগ দেন। তাঁরা হলেন—মলয়, মাহফুজ ও দুর্গা রানী। উনি কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছেন সেটি ম্যানেজিং কমিটির আমরা কেউ জানতাম না। পরে চাপ দিলে বাকি সদস্যদের প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন। কিন্তু আমি বিদ্যালয়ের উন্নয়নের বিষয়ে তাগিদ দিই। পরে বাধ্য হন এবং বিদ্যালয়ের উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন আমাকে। এর পর পরই উনি মারা যান। তখন আমি উন্নয়নের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। পরে হঠাৎ একদিন ওই হেড স্যারের ছোট ভাই সুমন আমাকে বলেন, আপনাকে ৮ লাখ টাকা দিতে বলেছিলেন বড় ভাই। পরে আমি সেই টাকা অফিসে বসে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্যারসহ গ্রহণ করি। প্রমাণ রাখতে ভিডিওটা করেন সুমন। তবে তিন নিয়োগে কত টাকা নিয়েছিলেন আগের হেড স্যার, সে বিষয়টি অস্পষ্টই থেকেই গেল।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে জানলাম বিষয়টা। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাকার বিনিময়ে নিয়োগ অবৈধ। সে ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটি এবং নিয়োগপ্রাপ্তরা আইনের আওতায় আসবে।’