গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে বুয়েট শিক্ষার্থীদের

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

সুনামগঞ্জের হাওড়ে ঘুরতে যাওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে গ্রেফতার করায় সারা দেশে তোলপাড় চলছে। স্বজনরা তাদের নির্দোষ দাবি করলেও পুলিশ বলছে-প্রাথমিক তদন্তে তাদের কাছ থেকে বেশকিছু স্পর্শকাতর তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মোবাইল ফোন ও ব্যাগ তল্লাশি করে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে সংঘাতে জড়ানোর ধারণা পাওয়া গেছে। সুনামগঞ্জে তাদের জমায়েত হওয়ার খবর গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেই ছিল। সেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক বলে দাবি করেছেন তাদের অভিভাবকরা। মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন দাবি করেন।

মঙ্গলবার সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান মো. শাফিউর রহমান জানান, সুনামগঞ্জে বুয়েট শিক্ষার্থীদের জমায়েত হওয়ার বিষয়টি উচ্চপর্যায়ের গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেই ছিল। সেই গোয়েন্দা তথ্য থেকে সুনামগঞ্জ পুলিশ তাদের নজরদারি করে এবং তাদের গ্রেফতার করে। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমাদের ধারণা-বর্তমান প্রেক্ষাপটে নাশকতার কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতেই সুনামগঞ্জে শিক্ষার্থীরা যান এবং এ অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের টার্গেট ছিল। তিনি জানান, ৩৪ জনের মধ্যে প্রথম বর্ষের পাঁচজন, সদ্য এসএসসি পাশ করা দুইজন এবং একজন তাদের কাজের লোক। আটজন তেমন কিছুই জানে না। তাদের বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে। বাকি ২৬ জন শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।

পরিকল্পনা করার জন্য সুনামগঞ্জে বুয়েট শিক্ষার্থীরা কেন যাবেন-জানতে চাইলে ডিআইজি শাফিউর রহমান জানান, বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ। এছাড়া ঢাকায় কড়া গোয়েন্দা জাল বিছানো। তাই তারা সুনামগঞ্জের হাওড়কেই বেছে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে। এদিকে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) রাজন দাস জানান, তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওড় থেকে গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বুয়েটের প্রথম বর্ষ থেকে ৪র্থ বর্ষে শিক্ষার্থী ২০ জন, মাস্টার্সের চারজন এবং সাবেক শিক্ষার্থী সাতজন। বাকিদের মধ্যে দুইজন সদ্য এসএসসি পাশ (দুই শিক্ষার্থীর আত্মীয়) এবং একজন কাজের লোক। তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে তাদের ব্যাগ ও মোবাইল ফোন জব্দ করে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে-ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম সংক্রান্ত স্ক্রিনশট, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কল্যাণ তহবিল সংক্রান্ত প্রচারপত্র, সদস্য ও সাথিদের পাঠযোগ্য কুরআন ও হাদিসের সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা অনুষ্ঠানসংক্রান্ত স্ক্রিনশটের কাগজপত্র।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) রাজন দাস দাবি করেন-প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতিসাধন, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার লক্ষ্যে সুনামগঞ্জে সমবেত হয়। বুয়েট শাখা ছাত্রশিবিরের বায়তুলমালবিষয়ক সম্পাদক আফিফ আনোয়ারের নেতৃত্বে একত্রিত হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। তাদের মোবাইল ফোন থেকে বেশকিছু স্পর্শকাতর তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সেসব বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিক তদন্তে একটি জুম আইডি পাওয়া গেছে, যা দিয়ে তারা ইসলাম ও যুদ্ধকৌশল নিয়ে সভা করেছে। গ্রেফতারের পর অনেকে মোবাইল ফোনের তথ্য মুছে দিয়েছে। তাই জব্দ মোবাইল ফোনগুলো ফরেনসিকে পাঠানো হবে। তাদের সাংগঠনিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো সবার সাংগঠনিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল্লাহ সিদ্দীকি, বায়তুলমাল সম্পাদক আফিফ আনোয়ার এবং শিবিরের সাথি বখতিয়ার নাফিস সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। বাকিদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। 

সোমবার তাহিরপুর থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে-আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন কথাবার্তাসহ একেক সময় একেক ধরনের কথা বলছেন।

এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে অনেক অভিভাবক হাজির হয়েছেন। মঙ্গলবার শিক্ষার্থী সাদ আদনান অপির বাবা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ছেলের খবর শুনে তিনি চট্টগ্রাম থেকে সুনামগঞ্জে এসেছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, দেশের ছেলে দেশে বেড়াতেই গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে। আমার ছেলে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে মনে সান্ত্বনা পেতাম।

ঢাকায় বুয়েট শহিদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অভিভাবক আলি আহসান জুনায়েদ। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে আমাদের সন্তানদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়ে তাদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ফলে নিরুপায় হয়ে সহযোগিতা পেতে আপনাদের দ্বারস্থ হয়েছি। মামলা নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন জানিয়ে তিনি বলেন, মামলার বিবরণীতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতিসাধন, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডসহ ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ কারণে আমাদের প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। নাশকতার অভিযোগ হাস্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, জব্দ মালামাল হিসাবে কতগুলো জিনিস উল্লেখ করা হয়েছে, যা সব বানোয়াট। টাঙ্গুয়ার হাওড়ে গিয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে-এমন অভিযোগও হাস্যকর।

দ্রুত জামিনের আবেদন জানিয়ে জুনায়েদ বলেন, এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পরিবার হিসাবে আমরা মানসিকভাবে বেদনাদায়ক সময় পার করছি এবং তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। দ্রুত তাদের জামিন ও মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানাচ্ছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056190490722656