গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষার আধুনিকায়ন

নিরঞ্জন রায়, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

একথা আজ অনেকেই স্বীকার করবেন যে, আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, সে তুলনায় গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষার মান সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি। উল্টো অনেক ক্ষেত্রে অবনতি হয়েছে। এমনকি গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থারও আধুনিকায়ন হয়নি। এখনও সেই গতানুগতিক ধারার ক্লাসনোট তৈরি করা এবং সেগুলো বুঝে না বুঝে মুখস্থ করে পরীক্ষায় উতরে যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে আমাদের দেশের গ্রাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থা। পক্ষান্তরে উন্নত বিশ্ব তো বটেই, অনেক উন্নয়নশীল দেশ, যেমন মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনের মত দেশের গ্রাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য আধুনিকায়ন ঘটেছে। এর ফলে তুলনামূলক বিচারে আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে গ্রাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষার মান অনেক পিছিয়ে পড়েছে। 

গ্রাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন 

আমাদের দেশের গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষা ব্যাবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এই পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় চতুর্মুখী পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রথমত, গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ের পদ্ধতি উন্নতি করা। দ্বিতীয়ত, গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষার পাঠ্যসূচির মান উন্নত করা। তৃতীয়ত, গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা। চতুর্থ, দেশের গ্রাজুয়েশন শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা। পঞ্চমত, গ্রাজুয়েশন শিক্ষার একটি অংশ বাস্তব কাজের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং ষষ্ঠত, গ্রাজুয়েশন পর্যায়ে শিক্ষাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বা স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যে একটা মিল থাকতে হবে বা সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করতে হবে।   

অপ্রয়োজনীয় গ্র্যাজুয়েট শিক্ষা ক্ষতিকর

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তিনির্ভর, যেখানে প্রতি বছর লাখ লাখ গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীর তৈরির প্রয়োজন হবে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। কেনোনা তখন দেশে যে মানের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে তার অধিকাংশের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস শিক্ষিতরাই যথেষ্ট। ফলে দেশের গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ অনেকটাই সীমিত হয়ে যাবে। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রাজুয়েট শিক্ষিত তৈরির সুযোগ থাকলে দেখা যাবে অনেক গ্রাজুয়েট শিক্ষিত যুবক উপযুক্ত কাজের সুযোগ না পেয়ে এমন অনেক কাজ বেছে নিয়েছে যা সে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেই করতে পারতো। এরকম অবস্থায় অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে বাধ্য। প্রথমত সেই গ্রাজুয়েট নিজে এবং তার পরিবারের যেমন অর্থের অপচয় হবে, অন্যদিকে তেমনি রাষ্ট্রেরও অর্থের অপচয় হবে। দ্বিতীয়ত, একজন গ্রাজুয়েট যখন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কাজ করবে তখন তার মধ্যে হতাশা দেখা দিবে। তৃতীয়ত, সে তখন কাজের ভাল পরিবেশও পাবে না। কেনোনা তার চার পাশে যারা কাজ করবে তারা সবাই থাকবে উচ্চ মাধ্যমিক পাস। ফলে এক ধরনের অস্বস্তিকর কাজের পরিবেশ বিরাজ করবে সেই গ্রাজুয়েট যুবকের জন্য। তদুপুরি সে কাজের ক্ষেত্রেও অনেক পিছিয়ে থাকবে। কেনোনা যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে এই কাজ শুরু করেছে তারা চার বছর আগে শুরু করে অনেকদূর এগিয়ে থাকবে। এসব কারণে গ্রাজুয়েট শিক্ষিত যুবক কাজের স্থানে নিজেকে সেভাবে মানিয়ে নিতে পারবে না। ফলশ্রুতিতে সে সেই কাজটি ঠিকভাবে করতে পারবে না। ফলে সেই গ্রাজুয়েট তখন দেশের সম্পদ না হয়ে দায়ে পরিণত হতে বাধ্য।

গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার জন্য কারা উপযুক্ত

মূলত গ্রাজুয়েশন পর্যায়ে শিক্ষা লাভ করতে আগ্রহী হবে সেই সকল শিক্ষার্থী যারা আগামীতে চিকিৎসা, প্রকৌশলী, আইন, বিজনেস, হিসাব বিজ্ঞান, মার্কেটিংসহ পেশাগত বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চান। এর বাইরে যারা আগামীতে অধ্যাপনা বা শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত হতে চান, যারা গবেষণার কাজে নিয়োজিত হবেন, উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে অধ্যয়ন করতে যাবেন এবং যারা দেশের নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে কাজ করতে আগ্রহী শুধুমাত্র তারাই গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষা নিতে পারেন। একারণেই এই পর্যায়ের শিক্ষা কিছুটা ব্যয়বহুল হবে এটাই স্বাভাবিক। 

শুধু তাই নয়, গ্রাজুয়েশন পর্যায়ে শিক্ষালাভে আগ্রহীদের যথেষ্ট মেধাবীও হতে হবে। এই মানের গ্রাজুয়েশন শিক্ষা অর্জনের সক্ষমতা অনেকের থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। এখানে সক্ষমতা বলতে শুধু মেধাকে বোঝায় না। গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষালাভের মেধা নিশ্চয়ই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আছে। কিন্তু শুধু মেধা থাকাই যথেষ্ট নয়।
মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েশন শিক্ষার জন্য মেধার পাশাপাশি আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। যেমন উচ্চ শিক্ষার অধ্যয়নের যে স্নায়ুচাপ থাকে সেটি নেয়ার মত ক্ষমতা অনেকের থাকে না। আবার অনেক শিক্ষার্থী সঠিকভাবে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারে না বা একসঙ্গে একাধিক কাজ সম্পন্ন করতে পারদর্শী হননা, যাকে এক কথায় মাল্টি টাস্কিং বলা হয়ে থাকে। এরকম অতিরিক্ত যোগ্যতা না থাকলে মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েশন প্রোগ্রাম সফলভাবে করা সম্ভব হয় না। আধুনিক গ্রাজুয়েশন শিক্ষার পাঠ্যসূচি এবং পাঠদান পদ্ধতি এমনভাবে সাজানো যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থেকে পড়াশোনা করতে হয় এবং যথেষ্ট সময় সংবেদনশীল অনেক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয় যা শিক্ষার্থী সহজে পেরে ওঠে না। একারণেই আধুনিক গ্রাজুয়েশন শিক্ষার জন্য মেধার পাশাপাশি অন্যান্য গুণাবলী থাকা অপরিহার্য। আমেরিকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বশর্ত হিসেবে স্যাট, অর্থাৎ স্কলাসটিক অ্যাপটিটিউড টেস্ট বা (এস-এ-টি) স্কোর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই এস-এ-টি এর মাধ্যমে যতো না মেধা যাচাই করা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি যাচাই করা হয় আগ্রহী শিক্ষার্থীর অন্যান্য অত্যাবশ্যিক গুণাবলী। এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের গ্রাজুয়েশন শিক্ষার সুযোগ নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের পাঠ্যসূচির ব্যপ্তি 

গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষার পাঠ্যসূচির বিষয়বস্তুর জটিলতা এবং গভীরতা দুটোই বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের দেশের গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষার মান অনেক নিচে নেমে গেছে। একজন গ্রাজুয়েট পাস ব্যাক্তির কাছ থেকে যে মাপের জ্ঞান এবং যোগ্যতা প্রত্যাশা করার কথা তা অনেকের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় না। অনেক গ্রাজুয়েট পাস শিক্ষিত যুবকের অর্জিত জ্ঞানের পরিধি এতটাই হাল্কা যে তারা অতি সাধারণ মানের কাজের জন্যও উপযুক্ত হতে পারে না।

এর অর্থ এই নয় যে গ্রাজুয়েশন শিক্ষা লাভ করে কেউ মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষা অর্জন করছে না। অনেক গ্রাজুয়েটের অর্জিত জ্ঞান আন্তর্জাতিক মানের এবং তারা বিভিন্ন দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পলান করছেন। এমনকি আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে যথেষ্ট দক্ষতা এবং সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পলান করছে। তাদের দক্ষতা এবং কাজের মান দেখে অবাক হতে হয়। তাদের এমন সফলতার জন্য আমরা অনেক গর্ববোধও করে থাকি।

প্রশ্ন হচ্ছে এদের সংখ্যা অনেক কম। তাছাড়া একই শিক্ষা ব্যাবস্থার অধীনে গ্রাজুয়েট পাস করে আসা শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞানের তারতম্য অনেক বেশি। হাতেগোনা কয়েকজন থাকে অসাধারণ জ্ঞানী, পক্ষান্তরে অধিকাংশের অর্জিত জ্ঞানের মানই খুবই সাধারণ। আর এখানেই আমাদের গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার চরম দুর্বলতা।
এই দুর্বলতা দূর করতে হলে গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষার পাঠ্যসূচির আমূল পরিবর্তন এনে একে জটিল এবং বিস্তৃত করতে হবে। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মানের পাঠ্যসূচি গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় রাখা হয় তার সঙ্গে মিল রেখেই আমাদের গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষার পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করতে হবে। এতে যুগপৎ দুটো লাভ হবে। প্রথমত আমাদের দেশের গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষার মান উন্নত হবে। দ্বিতীয়ত, উন্নত বিশ্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, এমনকি চাকরির বাজারে আমাদের দেশের গ্রাজুয়েটদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। 

একথা অনস্বীকার্য যে উচ্চ শিক্ষায়, বিশেষ করে গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষায় পরিবর্তন আনার কাজটা মোটেই সহজ নয়। এরকম কোনো উদ্যোগ নিতে গেলে প্রথমেই দেখা দিবে চরম বিরোধিতা। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আজ হোক আর কাল হোক এই কাজটি করতেই হবে। আর যেটি করতে হবে, তা যত দ্রুত শুরু করা যায় তাতই ভালো।

তবে এই পরিবর্তনের কাজে হাত দেয়ার আগে প্রথমেই এ ব্যাপারে জনমত তৈরি করা প্রয়োজন। প্রথমেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে তাদেরকে সম্মত করাতে হবে। তারপর শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সম্মতি নিতে হবে এবং তাদের মাধ্যমেই কাজটা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে তাদেরকেও সম্মত করাতে হবে। সমাজের সব অংশীজনদের সঙ্গে আগে থেকে আলোচনা করে তাদের সম্মতি নিয়ে শুরু করতে পারলে, কাজটি মোটেই কঠিন হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।
 
লেখক : সার্টিফাইড অ্যান্টি-মানিলন্ডারিং স্পেশালিষ্ট ও ব্যাংকার, টরনটো, কানাডা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077791213989258