ঘুমাতে পারছিলেন না আট বছর, অবশেষে যুবকের আ*ত্মহ*ত্যা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

প্রায় আট বছর ধরে ঘুম হচ্ছিল না গাজীপুরের এক যুবকের। সমস্যা সমাধানে করণীয় কোনো কিছুই বাদ রাখেননি তিনি। ৩৬ বছর বয়সী ওই যুবক ধীরে ধীরে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছিলেন। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল তার স্বাভাবিক জীবনের কার্যক্রম। এই হতাশা থেকে একপর্যায়ে বেছে নেন আত্মহত্যার পথ।

জানা গেছে, গৃহশিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে পড়াতেন স্বপন কুমার রায়। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিদিনের মতো এক সন্ধ্যায় পড়ানোর উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। দুদিন নিখোঁজ থাকার পর তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনার দীর্ঘ তদন্তের পর আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘুম না আসায় আত্মহত্যা করেছেন স্বপন।

পুলিশের এই তদন্ত সংস্থাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই মামলার তদন্তে স্বপন কুমার রায় শারীরিক ও মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত থাকার কারণে আত্মহত্যার বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। তদন্তকালে তার লেখা চিরকুট পাওয়া গেছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ঘুম না আসার সমস্যা এবং এ নিয়ে তার নানা হতাশার কথা লেখা ছিল। মামলাটি তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু জানিয়েছেন, ঘুমের সমস্যা থেকে আত্মহত্যাপ্রবণতা বাড়ে। তিনি বলেন, কারও যদি টানা তিন মাস ঘুম না হয় তাহলে তার অতিরিক্ত চিন্তা হয়, অস্থির থাকে। তার মধ্যে ডিপ্রেশন অ্যাংজাইটি, অক্সিজেন কমপ্লেক্সিটি ঘটে, সাইকিয়াট্রিক সমস্য দেখা দেয়, আত্মহত্যাপ্রবণতা বাড়ে।

পিবিআই জানায়, গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন স্বপন কুমার রায়। টঙ্গী বাজার ও মধুমিতা রোড এলাকার বাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। তিনি ২০২০  খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চে নিখোঁজ হন। এর দুদিন পর নিকটবর্তী এলাকার একটি জলাশয় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর তার পরিবার একটি হত্যা মামলা করে। মামলাটি তদন্তকালে জানা যায়, ঠিকমতো ঘুম না হওয়ায় স্বপন শারীরিকভাবে দুর্বল ও রোগাটে প্রকৃতির হয়ে যাচ্ছিলেন। এজন্য সব সময় ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতেন তিনি। এতেও ঠিকভাবে ঘুম না হওয়ায় চাকরি বা কোনো কাজে মন দিতে পারতেন না। এ ছাড়া স্বপন বিয়ে করবেন বলে তার পরিবারকে জানান। কিন্তু তার পরিবার স্বপনের চাকরি না থাকায় এবং সব সময় হতাশাগ্রস্ত ও শারীরিকভাবে দুর্বল থাকায় রাজি হয়নি।

পিবিআই তদন্তে স্বপনের দুটি চিরকুট পায়। এর মধ্যে একটি চিরকুটে লেখা ছিল ‘৭/৮ বছর ধরে ঘুমের সমস্যায় ভুগছি। একদমই ঘুম হয় না। না রাতে, না দিনে। টেনশন থাকলে ঘুম আসে না, স্বাভাবিক। কিন্তু আমি টেনশন না করলেও ঘুম আসে না। আনন্দে থাকলেও ঘুম আসে না। ঘুম ঘুম ভাব আসে। রাত এলে আস্তে আস্তে চোখ থেকে ঘুম চলে যেতে থাকে। চোখের সমস্যা, মাথার সমস্যা, নাকি মানসিক সমস্যা কিছু বুঝতে পারছি না। টেনশন না করে হাসি-আনন্দে থাকলেও ঘুম আসে না। ঘুম না হওয়ার মাত্রা দিন দিন যেন আরও বাড়ছে। কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করে দেখেছি। অনেক হাঁটি, বুকডাউন দিই, ওঠবস করি। ভাবি শারীরিক পরিশ্রম করলে রাতে ভালো ঘুম হবে। যত পরিশ্রমই করি না কেন ঘুম আসে না। দিনে ঘুমাতে চাই না। শুধু রাতে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমাতে পারলেই যথেষ্ট। কিন্তু আমার চোখে বিন্দুমাত্র স্বাভাবিক ঘুম আসে না। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। ঘুমের ওষুধ দিয়েছে। খেলে কোনো দিন ঘুম হয়, কোনো দিন ঘুম হয় না। অনেক বছর ধরে তো ওষুধ খাচ্ছি। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ঘুমের ওষুধ খেতে খেতে আমি ক্লান্ত। কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে টেনশন করি সেজন্য ঘুম হয় না। কিন্তু আমি তো বুঝি শুধু টেনশনের জন্য নয়। অন্য কোনো সমস্যা থাকতে পারে। দুশ্চিন্তা যদি থেকে থাকে তাহলে আমি বলব, ঘুম কেন হয় না। সেটাই আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ। ঘুম না হওয়া আমাকে দিন দিন ধ্বংস করে দিচ্ছে। কোনো চাকরি করতে পারি না। টাইমলি যেতে পারি না। কোনো কাজ করতে না পারার কারণে আর্থিক সমস্যায় ভুগছি।...’

এ ছাড়া এই চিরকুটে ঘুম না হওয়ার কারণে বিভিন্ন সমস্যার কথা লেখা ছিল। অন্য চিরকুটেও একই বিষয় সংক্ষেপে লেখা ছিল।

মামলার বাদী নিহত স্বপনের মা নিবেদিতা রায় বলেন, ‘আমরা ওর মৃত্যুর বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। কেন মারা গেল, কেউ কি হত্যা করেছে নাকি আত্মহত্যা করেছে। তবে ওর ঘুমের সমস্যা ছিল। বিভিন্ন সময় আমাদের বলেছে, ডাক্তার দেখিয়েছিল তবুও সমাধান হচ্ছিল না। কিন্তু এই ঘুমের সমস্যায় মারা গেছে, সেটাও আমরা একমত হতে পারছি না।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058281421661377