বড় কর্তাদের বোঝানো হয় অনলাইনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা করালে ঘুষের সুযোগ থাকে না। আরো বোঝানো হয় সাংবাদিকরা যা লেখে বা প্রচার করে তার সত্যতা পাওয়া যায় না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষার দুই সচিবের বর্তমান ও সাবেক পিও, পিওনসহ অনেকের মুখেই একই কথা শোনা যায়! এই পিও, পিওনদের সঙ্গে কতিপয় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার দোস্তি রয়েছে। বিশেষ করে যারা ডিআইএতে পদায়ন চান বা পান অথবা অভিযোগের কপি গায়েব করাতে চান তাদের সঙ্গে দোস্তি বেশি।
দৈনিক শিক্ষার কাছে সারাদেশের শত শত বেসরকারি শিক্ষক অভিযোগ জমা দেন। অভিনব কায়দায় ঘুষ চাওয়া ও নেওয়ার পুরো তথ্য তাদের হাতে থাকেনা। তবে, এক এমপিও, দুই এমপিওর টাকা যে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিয়ে আংশিক অথবা পুরোটা ‘মিনিস্ট্রি অডিটরদের’ হাতে পৌঁছে দেন এতে কোনো ভুল নেই। টাকায় কথা বলার প্রমাণ পাওয়া যায় অডিট, নিরীক্ষা ও পরিদর্শন প্রতিবেদনে। টাকা দিলেই পাওয়া যায় ‘সবকুছ ঠিক হ্যায়’ প্রতিবেদন। এমন হাজারো প্রতিবেদন আছে ডিআইএর হাতে। জুনিয়র সহকর্মীদের এসব ‘ফকফকা’ প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো নৈতিক মনোবল সাবেক পরিচালক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খান হাবিবুর রহমান ছাড়া কোনো পরিচালকের ছিলো এমন প্রমাণ মেলেনা।
দৈনিক শিক্ষার কাছে আসা একটি অভিযোগে জানা যায়, গত জুন মাসে অনলাইনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা হয়েছে লক্ষীপুর সদর ও রামগতির কয়েকটা মাদরাসা ও স্কুলের। প্রতিযোগীতামূলক বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষা ক্যাডারের একজন ‘মেধাবী’ কর্মকর্তা এই পরিদর্শনে করেন। কিন্তু কাগজপত্র ও ঘুষ নিয়ে শিক্ষকদেরকে ঠিকই ঢাকায় আসতে হয়েছে। ‘মেধাবী’ ও ‘চৌকস’ এবং সৌম্যদর্শন এই কর্মকর্তার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাক্ষরযুক্ত এক সাইজের কয়েকবাণ্ডিল কাগজ নিয়ে গোপন আস্তানায় দেখা করতে হয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। মিষ্টভাষী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে কয়েকডজন অভিযোগ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মেধাবী এই কর্মকর্তা চার বছরের বেশি সময় ধরে ডিআইএতে আছেন। যোগদানের ছয়মাসের মধ্যে বদলি হয়ে আসার খরচ তুলে ফেলেছেন। এ বিষয়ে তালিম নিয়েছেন ডিআইএর নিজস্ব একজন কর্মচারীর কাছে। নড়াইল অঞ্চলের ওই কর্মচারী শ্বশুর বাড়ীতে নিজেকে অফিসার পরিচয় দেন। ওই কর্মচারীই মেধাবী শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার সব পরিদর্শন প্রতিবেদন লিখে দিচ্ছেন ও দিয়েছেন।
তবে, ওই কর্মকর্তা ক্যাডার সদস্যদের মধ্যে প্রচার করেছেন যে, অমুক চাচার তদবিরে তিনি ডিআইএতে বদলি হতে পেরেছেন। পাওয়ারফুল অথবা ক্ষমতাবান সেই চাচা টাকা ছাড়া কোনো তদবির করে বলে কারো জানা নেই।
অভিযোগকারীরা ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করতে চান না। অভিযুক্ত কর্মকর্তা কথায় কথায় ক্ষমতায় টইটুম্বুর একটি জেলার নাম উল্লেখ করে থাকেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠা থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আদায় করেছেন।