গতকাল রোববার প্রথম ধাপের জেলাগুলোর তথ্য আপলোডের শেষ দিনে অধিকাংশ জেলায় ৩০-৪০ শতাংশ তথ্যই আপলোড করতে পারেননি প্রাথমিক শিক্ষকরা। মূলত সার্ভার জটিলতার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় কাজ শেষ না হওয়া শিক্ষকদের শিক্ষা কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেন না, এ ধরনের পরিস্থিতি মওকা বুঝে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা শিক্ষকদের শাস্তির ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে থাকেন। কেরানীগঞ্জের সাবেক একজন শিক্ষা কর্মকর্তা এখন ডিপিই হেড অফিসে বসে ছড়ি ঘোরায়। দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এমন আরো অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে ঘুষ দাবির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক আলমগীর মোহাম্মদ মনসুরুল আলম বলেছেন, শুরুর দিকে সার্ভারে সমস্যা ছিল। পরে সার্ভারের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
এখন যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য এন্ট্রির কাজ শেষ না হয়ে থাকে তাহলে সময় বাড়ানো হবে। যদি কেউ শিক্ষকদের কোনো ভাবে হয়রানির চেষ্টা করেন, তবে অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, রোববারের মধ্যে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের তথ্য সার্ভারে এন্ট্রির কথা ছিল। এই দুই বিভাগে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী আছে। কিন্তু রোববার রাত দশটা পর্যন্ত মাত্র ১০ লাখ ২২ হাজার তথ্য এন্ট্রি হয়েছে।
এই সংখ্যা ৩৩ শতাংশের কিছু বেশি। ঢাকা শহরে এই হার আরও কম। ঢাকা জেলার ১৭ থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেনানিবাস থানায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ১৭ হাজার ১৫৩ জন। কিন্তু মাত্র ৬১ জনের তথ্য এন্ট্রি হয়েছে।
এভাবে ডেমরায় ৫৯০৯০ জনের মধ্যে ৪২৬ জন, ধামরাইয়ে ৭৩৭৫৫ জনের মধ্যে ১৯৮১, ধানমন্ডিতে ১২৮৫১ জনের মধ্যে ১২১, দোহারে ৪০৪৪৯ জনের মধ্যে ৪২২ জনের তথ্য আপলোড করা সম্ভব হয়েছে।
লালবাগে ৩৬৯১৭ জনের মধ্যে ১৩৭৮ এবং মিরপুরে শিক্ষার্থী আছে ৬৬৪৮৮, এন্ট্রি হয়েছে ১০৭১ জনের। এভাবে বাকিগুলোতেও এই নাজুক পরিস্থিতি।
নাম প্রকাশ না করে কেরানীগঞ্জের এক শিক্ষক জানান, সরকারি নির্দেশনা পালনে তারা রাত জেগে তথ্য আপলোডের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সার্ভারে তথ্যই নিচ্ছিল না। পরে অবস্থার উন্নতি হওয়ায় কিছু কাজ হয়েছে।
ডিপিইর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আগে প্রকল্পের মাধ্যমে উপবৃত্তির অর্থ দেওয়া হতো। সর্বশেষ প্রকল্পের পক্ষে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদ অর্থ বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু গত জুলাই থেকে প্রকল্প নেই। এখন বিকাশসহ যে কোনো অ্যাকাউন্টেই উপবৃত্তি পাওয়া যাবে।
এখন নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে। এখন সরকারি রাজস্ব খাতের অর্থ থেকে উপবৃত্তি দেওয়া হবে। যদিও গত জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা এই অর্থ পায়নি।
এখন গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া অর্থ দেওয়া হবে। এরপর চলতি বছরের ৬ মাসের অর্থ দেওয়া হবে। গত জানুয়ারিতে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তার সঙ্গে এখনকার তথ্যের মিল হওয়ার কথা নয়। কেন না, গতবার যে ছাত্রটি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েছে, এবার সে পঞ্চম শ্রেণিতে।
এ জন্য শিক্ষকদের কষ্ট দিয়ে ৪ মাসের মাথায় ফের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে যেই অভিভাবক যে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের নাম দিচ্ছেন সেটির মাধ্যমে অর্থ পৌঁছানো হবে। এটি এখন উন্মুক্ত।