ঘুষ ছাড়া যেখানে নড়ে না ফাইল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঘুরেফিরে একই দপ্তরে ২৮ বছর । তাঁর কাছে অসহায় শিক্ষকরা। আচরণও বেপরোয়া। উৎকোচ ছাড়া কোনো ফাইলই ছাড়েন না। চাহিদা মেটাতে না পারলে করেন হয়রানি। তিনি বরগুনা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী দুলাল কৃষ্ণ মালাকার । এরই মধ্যে উপজেলার ছয় শতাধিক শিক্ষকের বকেয়া বিল দেওয়ার নামে তাদের কাছ থেকে ১ হাজার করে ৬ লাখ টাকার বেশি পকেটে পুরেছেন। অভিযোগ রয়েছে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল ও ভুয়া স্মারকের মাধ্যমে নিদিষ্ট মেয়াদের আগেই ৪৩ শিক্ষকের চাকরি স্থায়ীকরণ করে কামিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। শুধু তাই নয়, ঘুষ না দেওয়ায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের আনুষঙ্গিক খরচের জন্য বরাদদ প্রায় দেড় কোটি টাকার ৩৯টি চেক নির্ধারিত সময়ে জমা দেননি দুলাল । পরে এসব টাকা ফেরত গেছে মন্ত্রণালয়ে । এখন তা পেতে আবেদন করা হলেও কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। শনিবার (১৩ আগস্ট) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদেন এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আবু জাফর সালেহ্।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় দুলাল কৃষ্ণের বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্য, দায়িত্বে দুর্নীতির  প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি বরগুনা জেলা  প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন দিয়েছেন সদর উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ৪৭ শিক্ষক। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দুলাল কৃষ্ণ দাবি করেছেন, ভুলবশত চেকগুলো তিনি নির্ধারিত সময়ে জমা দিতে পারেননি । পরে অর্থ পেতে ঢাকায় আবেদন পাঠানো হয়েছে। ঘুষ না দেওয়ায় চেকসহ ফাইল আটকে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। স্বাক্ষর ও স্মারক জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে দুলাল কৃষ্ণ বলেন, আমি ঢাকায় আছি। বরগুনা আসি । আমার অফিসে আসেন, বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।

ভুক্তভোগী শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে. সহকারী শিক্ষকদের ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে গত ১৫ জুন পর্যন্ত ১৩তম  গ্রেডের বকেয়া বিল দেওয়ার জন্য দুলাল কৃষ্ণ সদর উপজেলার ছয় শতাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন । তিনি ২০২১-২২ অর্থবছরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের স্লিপ, বঙ্গবন্ধ ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের আনুষঙ্গিক খরচের জন্য বরাদ্দের ৩৯টি চেক (প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা) গত ২৬ জুলাই শেষ দিন থাকলেও অফিসের ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে টাকা ফেরত গেছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, অর্থ পেতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাঙিক্ষত  উৎকোচ না দেওয়ায় দুলাল কৃষ্ণ ইচ্ছা করে চেকগুলো জমা দেননি। দীর্ঘদিন একই স্থানে চাকরি করায় তিনি এতটাই বেপরোয়া যে. অফিসে তার কথাই আইন। এমনকি নতুন কোনো শিক্ষা কর্মকর্তা এলে দুলালের নিয়ন্ত্রণেই কাজ করতে হয়।

8৭ শিক্ষকের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে,দুলাল কৃষ্ণ শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মজিদের স্বাক্ষর জাল এবং একই বিরত স্মারক ব্যবহার করে নির্ধারিত মেয়াদের আগেই শিক্ষকদের স্থায়ীকরণের আদেশ দেন। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর ওই আদেশে ৪৩ শিক্ষককে স্থায়ীকরণ করা হয়, যার স্মারক নম্বর ১৮৪৯/৪০। আবেদনকারীরা এই স্মারক নন্বর ভুয়া দাবি করেছেন। কারণ, এ তালিকার ২১ নম্বরে খালেদা 

আক্তার রিনার যোগদানের তারিখ ১৯ জুন ২০১৬: ৩০ নম্বরে সহকারী শিক্ষিকা মোসা. মাহফুজা আক্তার লায়লার যোগদানের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ এবং ৩৭ নম্বরে সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা বেগমের যোগদানের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ দুই বছর মেয়াদের আগেই ২০১৭ সালের ২৮ দেওয়া হয়েছে। অথচ স্থায়ীকরণের জন্য অন্তত তিন
বছর চাকরির বয়স থাকার কথা নিজেই স্বীকার করেছেন দুলাল কৃষ্ণ।

আবেদনের দুই বছর আগেই সদর উপজেলার গাজী মাহমুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা খালেদা আক্তার রিনার চাকরি হবায়ীকরণ হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সম্ভবত ২০১৯ সালে কাগজপত্র অফিসে জমা দিয়েছিলাম স্থায়ীকরণ হয়েছে তবে কবে এটি হয়েছে, তা জানি না। আলমারির তালায় সমস্যা করছে। না হলে কাগজপত্র দেখে বলা যেত।

বরগুনা সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন বলেন, অফিসের উচ্চমান সহকারী দুলাল কৃষ্ণের ভুলে ৩৯টি চেক ব্যাংকে জমা হয়নি। পরে টাকা পেতে আবেদন করা হয়েছে। বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এম মিজানুর রহমান বলেন, চেক জমা না দেওয়ার বিষয়ে জবাব চেয়ে তাকে চিঠি দেওয়া হবে। শিক্ষকদের অভিযোগের
শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053169727325439