ঘুষ দাবি করে শিক্ষক হয়রানির অভিযোগ সভাপতির বিরুদ্ধে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ‘জ্যেষ্ঠ প্রভাষক’ পদোন্নতি ও উচ্চতর স্কেল দিতে এক শিক্ষকের কাছে মোটা অংকের ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে একটি মাদরাসার গভর্নিং বর্ডির সভাপতির বিরুদ্ধে। উপজেলার হাতিয়া আদর্শ এতিমখানা দ্বিমূখী আলিম মাদরাসার সভাপতি আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ। ঘুষের টাকা তুলে দিতে সহায়তা না করায় প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকেও বরখাস্ত করার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ এ তার বিরুদ্ধে।  

এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও ভুক্তভোগী প্রভাষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার হাতিয়া আদর্শ এতিমখানা দ্বিমূখী আলিম মাদরাসার সভাপতি আজিজুর রহমান ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের কাছে চাঁদা দাবি, নানাভাবে হয়রানি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

লিখিত অভিযোগ ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদরাসার জীববিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক এরশাদুল হক গত বছরের ১ আগস্ট জ্যেষ্ঠতা অনুসারে ‘জ্যেষ্ঠ প্রভাষক’ পদে অধ্যক্ষ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের বিষয়টি গভর্নিং বর্ডির সভায় উপস্থাপন করা হলে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পরবর্তীতে সভাপতি আজিজুর রহমান প্রভাষক এরশাদুল হকের কাছে উচ্চতর স্কেল দেয়ার রেজুলেশনে স্বাক্ষর করার জন্য দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না পেলে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করবেন না বলে অধ্যক্ষ আব্দুল হাই ও প্রভাষক এরশাদুল হককে জানিয়ে দেয়া হয়। ফলে ভুক্তভোগী প্রভাষক এরশাদুল হক পদোন্নতির স্কেলের জন্য আবেদন করতে পারেননি।

শিক্ষকরা জানান, সভাপতির অবৈধ নির্দেশনা না মানায় অধ্যক্ষকে শোকজ করা হয়েছে এবং তাকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়াও চলছে। সভাপতি ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক অধ্যক্ষ হওয়ার সুবাদে টিউশন ফিসহ অন্য আর্থিক বিষয়গুলো অধ্যক্ষ ও অন্য শিক্ষকদের স্বাক্ষর জালের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে আসছেন সভাপতি। এছাড়াও তিনি অনুমোদনহীন ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগের জন্য তিনজন প্রার্থীকে চাকরির লোভ দেখিয়ে মোট ১৪ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এ নিয়ে সভাপতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত ওই তিন চাকরি প্রাথীর বাকবিতণ্ডা হয়।


 
ভুক্তভোগী প্রভাষক এরশাদুল হক বলেন, গত ১৫ জুন আমি ইউএনও স্যার বরাবর আবেদন করি। পরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরেজমিন তদন্ত করলে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে বিধি মোতাবেক গত ২ আগস্ট ‘জ্যেষ্ঠ প্রভাষক’ পদে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু ঘুষ না দেয়ায় সভাপতি রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেননি।

মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুল হাই  দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সভাপতি আজিজুর রহমান আমাকে প্রস্তাব দেন আমি যেনো এরশাদুলের কাছ থেকে তাকে দুই লাখ টাকা নিয়ে দেই। কিন্তু আমি তার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে শোকজ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রক্রিয়াও চলছে বলে জানতে পেরেছি।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে অভিযুক্ত সভাপতি আজিজুর রহমানের সঙ্গে যোগযোগ করা হলেও তিনি সুস্পষ্টভাবে কোনো মন্তব্য জানাননি। ব্যস্ততার অজুহাতে পরে কথা বলবেন দাবি করে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
 
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতার্ শাহ্ মো. তারিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) শোভন রাংসা অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতার্কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002830982208252