বরগুনার বেতাগীতে বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মচারি নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের টাকা ভাগ-বাটোয়ার নিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতির মধ্যে কয়েক দফায় বাগ-বিতণ্ডা এবং এর জেরে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মচারি নিয়োগে গত দু'মাস আগে বেসরকারি কর্মচারি নিয়োগবিধি অনুসারে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
কলেজ পরিচালনা পরিষদ নিয়োগ বোর্ড গঠন করে এবং গত বছরের ২২ ডিসেম্বর যথাবিধি নিয়মানুসারে জীববিজ্ঞান ল্যাব সহকারী পদে ১ জন, রসায়ন ল্যাব সহকারী পদে ১ জন, কম্পিউটার ল্যাব সহকারী পদে ১ জন, চতুর্থ শ্রেণির পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১ জন এবং আয়া পদে ১ জন- মোট ৫ জন কর্মচারি নিয়োগ দেয়া হয়। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাকরিবিধি নিয়মানুসারে নিয়োগকৃত কর্মচারিরা যথাসময় যোগদান করেন।
এর পরই কলেজ পরিচালনা পরিষদের বিরুদ্ধে উন্নয়ন তহবিলের নামে ১০ লাখ টাকা এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে গোপনে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মেধা ও যোগ্যতাসম্পপন্ন একাধিক নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থী কলেজে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন। ওই কলেজের একাধিক শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে অভিযোগ করে বলেন, অধ্যক্ষ ও সভাপতি কলেজের উন্নয়নের কথা বলে প্রকাশ্যে ৫ জন কর্মচারির কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং তাদের কাছ থেকেই নিয়োগের দেওয়ার জন্য আরো ১০ লাখ টাকা ঘুষ নেন। এ নিয়ে নিয়োগবঞ্চিতরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার দুপুরে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা নিয়োগের টাকা ভাগ-বাটোয়ার নিয়ে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে এক সভায় বসেন। সেখানে সভাপতি কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ঘুষের টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা ধার হিসেবে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। এ নিয়ে কলেজের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল খালেক ও অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সভাপতি আব্দুল ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার বিশ্বাসকে মারধর করেন। পরে কলেজের শিক্ষকরা এসে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এ বিষয়ে বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিয়োগকৃতদের কাছ থেকে কলেজের উন্নয়নখাতের জন্য বরাদ্দ হিসেবে মোট ১০ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ টাকা ব্যয়ের বিষয়ে সভাপতির সাথে তর্কবিতর্ক হয়েছে। ঘুষ বাণিজ্যের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বিবিচিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল খালেক বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারিদের কাছ থেকে উন্নয়নখাতের জন্যে কিছু টাকা নেওয়া হয়। ওই টাকা থেকে আমি ৫ লাখ টাকা ধার নিতে চেয়েছি। এ নিয়ে অধ্যক্ষের সাথে বিতর্ক হয়েছে। তবে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর কর্মচারি নিয়োগে কোনো ঘুষ নেওয়া হয়নি। এ অভিযোগ মিথ্যা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এবিএম গোলাম কবির বলেন, দলের কোনো নেতাকর্মী দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কোনো কাজ করলে এর দায়ভার দল নেবে না।