ঘূর্ণিঝড় মোকা : ডুবে যেতে পারে সেন্টমার্টিন, পাহাড় ধসের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কক্সবাজার উপকূলে রোববার দুপুরে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোকা । এতে পাহাড় ধসের পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যেতে পারে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় পুরোটা। এর প্রভাব পড়তে পারে টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায়। গতকাল সকাল ১০টা থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়ছে মানুষ।

ভূমিধস ও বন্যায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সাড়ে ৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৩৭টি স্থাপনাকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। জেলেরা তাঁদের মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা তীরে নিরাপদে নিয়ে এসেছেন। গতকাল সকালে সেন্টমার্টিন থেকে ৬০০ মানুষ নিয়ে রওনা হয়ে কাঠের দুটি ট্রলার টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে ভেড়ে। দ্বীপ ছেড়ে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বীপের চারদিকে পানি। সকালে বাতাসের গতি বাড়ার পাশাপাশি সমুদ্রের ঢেউ বাড়ছে।’

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, মূলত সচ্ছল পরিবারের লোকজন দ্বীপ ছাড়ছে। গত কয়েকদিনে প্রায় ২ হাজারের মতো মানুষ দ্বীপ ছেড়েছে।

এদিকে গতকাল বিকেল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাইকিংয়ের পাশাপাশি সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ক্যাম্পগুলোতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি স্কুল ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ মজবুত সেন্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো. হোসাইন জানান, পাহাড়ের তীরে ঝুপড়ি ঘর হওয়ায় তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের পাশের স্কুল এবং খাদ্য বিতরণ সেন্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলায় ১০১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি। মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা টেকনাফের নাফ নদের তীরে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপ। এ দ্বীপে  ৩৫ হাজার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে দ্বীপের নদীর পাড়ের মানুষ ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।

নদীপাড়ে বসবাসকারী শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার মো. তৈয়ুব বলেন, নদীর সঙ্গে আমাদের বসবাস। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নদীর পানি বেড়েছে। তাই মালপত্র ট্রাকে করে সরিয়ে নিচ্ছি। আমরা ঘরের লোকজন সবাই নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রের আশপাশে চলি যাচ্ছি।

কক্সবাজারের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে আজ শনিবার সকাল থেকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান। এদিকে কক্সবাজার সৈকতে সব কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। কোনো পর্যটক যেন সমুদ্রে নামতে না পারেন সে জন্য জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড বাহিনীর পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকায় কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার বেড়িবাঁধের তিনটি পয়েন্ট ঝুঁকিতে আছে। ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ ঠিকাদারের অবহেলায় শেষ করা যায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি যে এলাকা ও দ্বীপে আঘাত হানতে পারে, তা দেশের অন্য উপকূলীয় এলাকা থেকে আলাদা। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয়শিবিরগুলোয় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করে, সেখানে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কারণ, রোহিঙ্গাদের বসতি এলাকাগুলো মূলত পাহাড়ের মধ্যে। আর ওই পাহাড়গুলোর মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি। ফলে ভারী বৃষ্টিতে সেখানে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতি যদি মাঝারি মাত্রারও হয়, বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055229663848877