জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের ষষ্ঠ তলায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। পর্যাপ্ত জায়গার সংকট, বাজেট স্বল্পতা, স্থায়ী ও দক্ষ লোকবলের অভাব এবং পর্যাপ্ত বইয়ের সংকটের মধ্য দিয়েই চলছে এ গ্রন্থাগার। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় এ গ্রন্থাগারে আগে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বই নিয়ে প্রবেশের অনুমতি ছিলো না। যার ফলে বেশিরভাগ সময়ই শিক্ষার্থী শূন্য থাকতো কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নিজস্ব বই নিয়ে লাইব্রেরি প্রবেশের অনুমতি দেয় কতৃপক্ষ। এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের আগমন বাড়তে থাকে লাইব্রেরিতে। ফলে বাড়তে থাকে আসন সংকট। অনেক শিক্ষার্থীই লাইব্রেরিতে এসে জায়গা না পেয়ে ফিরে যান।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সূত্রে জানা যায়, এখানে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার। এ ছাড়া, বিভিন্ন জার্নাল ও রিসোর্সের সফট কপি রয়েছে লক্ষাধিক যা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ব্যবস্থার ক্যাটালগ পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত বই বা জার্নাল খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়।
জানা যায়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের জন্য ২০২১ খ্রিষ্ঠাব্দে লাইব্রেরি অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু হয়। এ কাজের জন্য একটি কমিটিও গঠন করে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক।
কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রাক ইইউনিভার্সিটি ও এআইইউবিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার পরিদর্শন করেন। গ্রন্থাগার সফটওয়্যার তৈরির জন্য পরে বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কমিটির সদস্যরা। তবে পর্যাপ্ত বাজেট সংকটে এ কাজ খুব বেশি এগোয়নি। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও নামমাত্র মূল্যে ওয়েবসাইট তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে লাইব্রেরির একটি ওয়েবসাইট তৈরি ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি। ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত রয়েছে নামমাত্র কয়েকটি বই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক মো. এনামুল হক বলেন, আমরা অটোমেশনের চালু করলে আমাদের এ বিষয়ে আইটি এক্সপার্ট প্রয়োজন। আমরা যদি লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার চালু করি তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের বই গ্রন্থাগারের কোথায় আছে বা পর্যাপ্ত আছে কি না তা ওয়েবসাইটে লগইন করেই দেখতে পাবে। এখানে বিভিন্ন বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিকে যুক্ত করা পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। কিন্ত আমাদের এক্ষেত্রে কোনো দক্ষ লোকবল নেই। অটোমেশন চালু করার পর সেটা মেইনটেনেন্সের প্রয়োজন। নাহলে কখনো যদি সাইট ক্রাশ করে বা অন্যান্য সমশ্যা হয় তাহলে টেকনিক্যাল সাপোর্টের অভাবে ডাটা হারিয়ে ফেলতে পারি।
তিনি আরো বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারের জন্য আলাদা একটা ভবন থাকে। আমাদের তা নেই। নতুন ক্যাম্পাস হলে সেখানে এই সংকট আর থাকবে না। পর্যাপ্ত বই না থাকার বিষয়ে এ গ্রন্থাগারিক আরো বলেন, বিভিন্ন বিভাগ তাদের নিজস্ব বই অনেক সময় গ্রন্থাগারে দিয়ে যায়। ত্রিশ হাজারের মতো বই রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের ইউজিসি থেকে কেনা ছয় হাজারের মতো সফটকপি আছে। বাইরের বিভিন্ন সংস্থার দেয়াসহ লক্ষাধিক জার্নাল ও পেপারের সফটকপির অ্যাক্সেস রয়েছে। যদিও আমাদের গ্রন্থাগারে যে বই আছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত এটা বলা যাবে না। এক্ষেত্রে ফান্ডের সংকট একটা বড় বাধা আমাদের। পর্যাপ্ত ফান্ড পেলে হয়তো আমরা বইয়ের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো। এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য আমরা উপাচার্য মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি আমাদের সঙ্গে একদিন বসবেন বলেছেন, আমরা তাকে বিস্তারিত জানাবো। তিনি আশা করি ব্যবস্থা নিবেন।
প্রসঙ্গত, আজ জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ দেশে দিবসটি প্রথম পালিত হয়। তবে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপনের জন্য কোনো নিজস্ব উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।