দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২১ বছরে একজন বিদেশি শিক্ষার্থীও পড়তে না আসায় প্রতি বছরই খালি থাকছে শতাধিক আসন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকলেও গত ২১ বছরে চবিতে প্রায় তিন হাজার আসন শূন্য থেকে গেছে। চবিতে ভর্তি হতে দেশের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হলেও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নেই ভর্তি পরীক্ষার ঝামেলা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চবিতে ২০২৩-২৪ সেশনে ভর্তির জন্য কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী আবেদন না করায় খালি আছে ১১৩টি আসন। প্রতিটি বিভাগে দুটি আসন সংরক্ষিত রাখা হয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। সর্বপ্রথম ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ার উদ্দেশ্য নেপাল থেকে চারজন শিক্ষার্থী চবিতে ভর্তি হন। তারা ইনস্টিটিউট অব ফরেস্টি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসে ভর্তি হন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে নেপালি শিক্ষার্থীদের পদচারণা ছিল চবিতে। পরে ১৯৯০-৯১ থেকে ৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত স্নাতক কোর্সে ১৫ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। আর স্নাতকোত্তরে ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মাত্র চারজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া এই ১৯ জন শিক্ষার্থীর সবাই ছিলেন নেপালের নাগরিক।
চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২৩-২৪) ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউটে ২টি করে এবং বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটে ৫টিসহ মোট ১১৩টি আসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আছে। ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেননি। শুধু এ বছরই নয়, গত ২১ বছরেও স্নাতক কোর্সে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে পড়তে আসার নজির নেই। এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ২১ বছরে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়াতে মোট ২ হাজার ৬১৭টি আসন শূন্য ছিল।
তবে এর সামান্য ব্যতিক্রম দেখা গেছে ভাষা শিক্ষা ও অনলাইনে অধ্যয়নের ক্ষেত্রে। লক্ষ করা গেছে, বিগত ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে চারজন চীনা শিক্ষার্থী চবিতে ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধীনে এক বছর মেয়াদি ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। এ ছাড়া আইন অনুষদে একজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি ছিলেন। তবে তিনি সশরীরে নয়, অনলাইনে তার শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৭০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী আছেন। সবচেয়ে বেশি ১৯১ জন রয়েছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া হাবিপ্রবিতে ১১৭, বাকৃবিতে ৭২, ঢাবিতে ২৯, রাবিতে ২৪, বুয়েট ও ইবিতে ৭ জন করে এবং জাবিতে ৩ জনসহ বিভিন্ন প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নরত আছেন।
জিন্নাত সুলতানা নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, তৎকালীন অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়। যেকোনো সংঘর্ষে তারা নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় থাকতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভারমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন বলেন, ‘একটা সময়ে নেপালের শিক্ষার্থীরা আমাদের বিভাগে পড়তে আসত। এখন আর আসে না। কারণ তাদের দেশে এ কোর্স চালু হয়েছে। তাছাড়া এ কোর্সে চাকরির সুযোগ কম। অনেকেই আবার ভারতে পড়তে যায়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে অ্যাকাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এসএম আকবর হোছাইন বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীরা চাইলেই আমাদের এখানে ভর্তি হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তাদের জন্য ভর্তির তথ্যাদি, সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে।’
বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে কোনো সময়সীমা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের এই আবেদন প্রক্রিয়া নিজ বিভাগে প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার আগেই সম্পন্ন করতে হয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে আসুক আমরাও চাই। তারা তাদের ইচ্ছেমতো যেকোনো কোর্সে ভর্তি হতে পারে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো স্কলারশিপ দেওয়া হয় না। এটা তাদের দেশের সরকার চাইলে ব্যবস্থা করতে পারে।’