দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের আজ মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ অগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা উভয়েই চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র-নির্মাতা ও চিত্রকর। ঋতুপর্ণ ঘোষ সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন।
ঋতুপর্ণ ঘোষের কর্মজীবন শুরু হয় বিজ্ঞাপনী দুনিয়ায়। তার পরিচালনায় প্রথম ছবি হিরের আংটি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায়। এটি ছিলো ছোটদের ছবি। ছবিটি তৈরি হয়েছিলো শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাস অবলম্বনে। এতে অভিনয় করেছিলেন বসন্ত চৌধুরী, মুনমুন সেন প্রমুখ।
১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তার দ্বিতীয় ছবি ‘উনিশে এপ্রিল’ মুক্তি পায়। এই ছবিতে এক মা ও তার মেয়ের পারস্পারিক সম্পর্কের কাহিনি দেখানো হয়েছে। ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবেও সফল হয়। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে এই ছবি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পায়। এরপর ‘দহন’ মুক্তি পায় ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে এই ছবি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পায় এবং এই ছবির দুই অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও ইন্দ্রাণী হালদার একসঙ্গে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পান। ‘দহন’ ছবির বিষয়বস্তু কলকাতার রাস্তায় এক মহিলার ধর্ষিত হওয়ার কাহিনি। অপর একটি মেয়ে সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। সে এগিয়ে আসে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু সমাজ ও ধর্ষিতার পরিবার পরিজনের ঔদাসিন্যে সে হতাশ হয়।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পাওয়া ‘অসুখ’ ছবিতে এক অভিনেত্রী ও তার আয়ের উপর অনিচ্ছুকভাবে নির্ভরশীল বাবার সম্পর্ক দেখানো হয়। এটি শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পায়। ‘বাড়িওয়ালি’ মুক্তি পায় ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে।
২০০০ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘উৎসব’ শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পায়। এই ছবির বিষয়বস্তু এক একান্নবর্তী পরিবারের ভাঙন। এই পরিবারের সদস্যরা তাদের পারিবারিক বাড়ি থেকে বেশি দূরে না থাকলেও বছরে শুধু একবার দুর্গাপূজার সময় একত্রিত হয়। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘তিতলির গল্প’ এক কিশোরীকে কেন্দ্র করে।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ঋতুপর্ণের প্রথম হিন্দি ছবি ‘রেইনকোট’ মুক্তি পায়। এই ছবিটি ও. হেনরির ছোটগল্প ‘দ্য গিফট অব দ্য ম্যাজাই’ অবলম্বনে নির্মিত। এই ছবিতেও ঐশ্বর্যা রাই অভিনয় করেছিলেন; সঙ্গে ছিলেন অজয় দেবগন। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে তার বাংলা ছবি ‘অন্তরমহল’ মুক্তি পায়। এটি ব্রিটিশ আমলের এক জমিদার পরিবারের গল্প।
মৃত্যুর আগে তিনি তার পরবর্তী ছবি ‘সত্যান্বেষী’-র শ্যুটিং শেষ করেছিলেন। এই ছবিটি গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সীর কাহিনি অবলম্বনে তৈরি হচ্ছিলো।
ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রথম অভিনয় করেন ওড়িয়া ছবি কথা দেইথিল্লি মা কু-তে। হিমাংশু পারিজা পরিচালিত এই ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের আরেকটি প্রেমের গল্প এবং সঞ্জয় নাগের মেমরিজ ইন মার্চ ছবিতে অভিনয় করেন।
ঋতুপর্ণের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘চিত্রাঙ্গদা’। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রাঙ্গদার কাঠামো অবলম্বনে নির্মিত। এটি ৬০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ জুরি পুরস্কার পায়।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তার কলকাতার বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যু ঘটে। তার দুই পরিচারক দিলীপ ও বিষ্ণু তাকে বিছানায় অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান। প্রতিবেশী নীলাঞ্জনা সেনগুপ্ত ডাক্তার নিরূপ রায়কে খবর দেন। তিনি এসে ঋতুপর্ণ ঘোষকে মৃত ঘোষণা করেন।