আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলা চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের আজ জন্মদিন। তিনি ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তৎকালীন ভারতবর্ষের পাবনার ভারেঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পাশাপাশি কবি ও নাট্যকার। মা ইন্দু বালা দেবী। ১১ ভাই বোনের মধ্যে ঋত্বিক কুমার ঘটক ছিলেন সবার ছোট এবং সকলের আদরের।
বড়ভাই মনিশ কুমার ঘটক ছিলেন শিক্ষাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, থিয়েটার ব্যক্তিত্ব। তার মেয়ে, নাম করা লেখক মহাস্বেতা দেবী। পুরো পরিবারটি ছিলেন সাংস্কৃতিক অনুরাগী।
ঋত্বিক কুমার ঘটকের মায়ের বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর মিঞাপাড়া পাবলিক লাইব্রেরির পাশে (বর্তমান হোমিওপ্যাথি কলেজ)। এখানে ঋত্বিক কুমার ঘটক বেড়ে উঠেন। শোনা যায় তিনি কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাজশাহী কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স করেন। এখানে অধ্যায়নকালে লেখক হিসেবে পরিচিতি পান। রাজশাহী কলেজ এবং পদ্মা নদী ছিলো তার প্রিয় স্থান। অবসরে পদ্মা নদীর ধারে গিয়ে লেখালেখির বিষয় নিয়ে ভাবতেন। পদ্মা নদীর চরে বেড়াতেন।
সহপাঠিদের সঙ্গে ছিলো মধুর সম্পর্ক। ছোটদের নিয়ে বেড়াতে তিনি ভালোবাসতেন। তবে তার মনোযোগ থাকতো পড়াশোনা, লেখালেখির দিকে। ভারতবর্ষ ভেঙে গেলে পরিবারের সঙ্গে ওপার বাংলায় চলে গেলেও কখনো ভুলে যাননি জন্মভূমি এপার বাংলাকে। তার একটি চলচ্চিত্রে তিনি এপার বাংলাকে দেখিয়ে বলেন, ‘ঐ আমার দেশ।’
তার প্রথম লেখা নাটক ‘কালো সায়োর’ যুক্ত হন ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটারে। চলচ্চিত্রকার বিমল রায়ের সহযোগী হিসেবে তার চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রবেশ। চলচিত্রকার নিমাই ঘোষের ‘ছিন্নমূল’ চলচ্চিত্রের অভিনয় শিল্পী ও সহকারী পরিচালক ছিলেন। তৈরি করেন নিজের চলচিত্র ‘নাগরিক’।
‘অযান্তিক’ চলচিত্র তৈরির পর তার খ্যাতি আরো ছড়িয়ে পড়ে। তৈরি করেন ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে।’ শরনার্থি কাহিনী নিয়ে তৈরি করেন ‘ট্রিলজী’। তার ‘মেঘে ঢাকা তারা’ চলচ্চিত্রটি দর্শকের মন জয় করে নেয়। ‘কোমল গাদ্দার’ ও ‘সুবর্ণা রেখা’ তৈরির পর তার আর্থিক সংকট দেখা দেয়। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। চেষ্টা করতে থাকেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার। তিনি বেশ কিছু প্রামাণ্য চলচ্চিত্র, তথ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেন।
এগুলো হলো, ‘জীবন স্রোত’, ‘বিহারকা দর্শনীয় স্থান’, ‘ইয়ে কৌন’, ‘সায়ান্টিফিক অব টুমরো, ‘আমার লেলিন’ “প্রভৃতি। যে, চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করতে পারেনি, সেগুলো হলো, ‘কত অজানা রে’, ‘বাংলার দর্শন’, ‘রঙের গোলাপ’, ‘বেদেনী’, ‘ইন্দিরা গান্ধী’, ‘ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান’, ‘পারসোনালিটি স্টাডি’।
তিনি ভারতের পুনা ফ্লিপ ইন্সটিটিউটে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। একজন খাঁটি বাঙালি হয়েও দক্ষতার সঙ্গে মুম্বাই এর হিন্দি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখে শুনাম অর্জন করেন। বাংলাদেশ ভারত যৌথভাবে তৈরি মল্লব বরমনের কাহিনী নিয়ে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ দর্শকদের হৃদয়ে বেশ নাড়া দেয়। তার লেখা শেষ নাটক ‘জ্বালা’, চলচ্চিত্র ‘যুক্তি তর্ক গল্প’ তৈরি করেন স্বরচিত কাহিনী নিয়ে। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি এই চলচ্চিত্রকার পরলোকগমন করেন। সুষ্ঠু চলচ্চিত্র প্রেমীদের কাছে তিনি অমর। তিনি বেঁচে আছেন তার তৈরি চলচ্চিত্রগুলোতে। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত করেন।