চাঁদা না পেয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে অপহরণের অভিযোগে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ। আজ শনিবার তাঁদের তিন দিনের রিমান্ডে চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা কলেজের নর্থ হলের ১২০ নম্বরে রুমে এই ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবার রাতে নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী। মামলার পর ঢাকা কলেজের হল থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। মামলা আসামিরা সবাই ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সবাই নর্থ হলের আবাসিক ছাত্র।
গ্রেফতার ছাত্রলীগের নেতার হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসম্পাদক জনি হাসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক এস এম শফিক।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন ছাত্রলীগ কর্মী মো. গোলাপ হোসেন, মোহেরাব হোসেন সিয়াম, অর্ণব, মো. রমজান, গোপাল, রাব্বী তালুকদার, মো. বেল্লাল হোসেন, তারিফ, সালমান, মো. রায়হান, মাসুম, ফাহিম ও শাহীন।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল গনি সাবু এসব তথ্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, অয়ন সিগমাইন্ড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে কাজ করেন ভুক্তভোগী মো. মেহেদী হাসান। প্রতিষ্ঠানটি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ করে। অভিযুক্তরা ঢাকা কলেজের ছাত্র পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করেন এবং ভুক্তভোগী মেহেদীর কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা না দেওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজ এলাকা থেকে প্রতিষ্ঠানটির লাগানো সিসি ক্যামেরাসহ অন্য যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে যায়। [inside-add]
ওই দিন রাতে সিয়াম ও রমজান দুই ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদীকে ফোন করে বিষয়টি জানান। খুলে নিয়ে আসা ক্যামেরা ফেরত পেতে হলে তাঁদের ঢাকা কলেজে যেতে বলেন তাঁরা। তৌকির নামে এক কর্মচারীকে ঢাকা কলেজে পাঠান মেহেদী। ক্যামেরা ফেরত নিতে আসা তৌকিরকে জিম্মি করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পেলে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
পরে ভুক্তভোগী মেহেদী ঢাকা কলেজের নর্থ হলে এলে তাঁকেও জিম্মি করা হয়। ছাত্রলীগের নেতাদের নেতৃত্বে মেহেদী ও তৌকিরকে হলে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছে থাকা নগদ টাকা, এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেন তাঁরা। রাতে মারধর করে তৌকিরকে ছেড়ে দিলেও মেহেদীকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের কারণে মেহেদীর অবস্থা বেগতিক দেখে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা কলেজ থেকে বের করে নিউমার্কেটের গাউছিয়া মোড়ে কৌশলে ফেলে রেখে পালিয়ে যান অভিযুক্তরা।
এই সময় নিউমার্কেট থানার টহল পুলিশকে বিষয়টি জানালে তারা মেহেদীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মেহেদী বাদী হয়ে জনি হাসান, এস এম শফিকসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি।
ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী জসিম উদ্দিন নামের এক নেতা বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতাম না। আমি জানলে ঘটনা এত দূর গড়াত না। সমাধান হয়ে যেত। নেতা-কর্মীরা আমাকে বিষয়টি পরে জানায়, তখন আমার কিছু করার ছিল না।’
নিউমার্কেট থানার ওসি মো. শফিকুল গনি সাবু বলেন, ‘বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে তারা ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে নেই বলে জেনেছি। মামলাটির তদন্ত চলছে। জড়িত অন্যদের গ্রেফতার অভিযান চলছে।’