চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে শাহেদুল ইসলাম নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা সোমবার এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। নুরুজ্জামান নাজির বাড়ি পাঠানিয়াগোদা এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম কিন্ডার গার্টেন ও হাজেরা তজু স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে।
এদিকে চান্দগাঁও থানা পুলিশ রহস্যজনক কারণে এ ঘটনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পালটা মামলা গ্রহণ করেছে। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের রক্ষা ও আড়াল করতেই ওসি ‘ম্যানেজড’ হয়েই মিথ্যা এই পালটা মামলা গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানতে চাইলে ওসি মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরেই দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এ ঘটনায় পালটাপালটি দুটি মামলা হয়েছে। কারা দোষী, তা তদন্তে বের হয়ে আসবে।’
প্রভাবিত হয়ে পালটা মামলা গ্রহণ করা হয়েছে-এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, যে কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা মামলা নিতে বাধ্য। তদন্তে যদি সে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, অবশ্যই মামলার ফাইনাল রিপোর্ট বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তিনি বলেন, ‘মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই।’
সূত্র জানায়, সানোয়ারা ইসলাম ট্রাস্ট চান্দগাঁওয়ে চট্টগ্রাম কিন্ডার গার্টেন ও হাজেরা তজু স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা করে। বিশ্বমানের কিন্ডার গার্টেন স্কুলটি চট্টগ্রামে বেশ খ্যাতি পেয়েছে। চান্দগাঁও নুরুজ্জামান নাজির বাড়ির পাঠানিয়াগোদা এলাকায় নিজেদের ক্রয়কৃত জায়গার ওপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি প্রতিষ্ঠিত। এসব জায়গা-জমির নামজারি থেকে শুরু করে হালনাগাদ সব দলিল প্রতিষ্ঠানের রয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, এরপরও স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ জমির মালিকানা দাবিসহ নানা কৌশলে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। স্কুলের সীমানা দেওয়াল নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে বাধা দিয়ে আসছিল। চাঁদা দাবি ও হুমকিধমকির কারণে ৭ এপ্রিল ওই গ্রুপটির বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। এরপরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সর্বশেষ ১৯ এপ্রিল দুপুরে ব্যাংক কর্মকর্তা শাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় ও বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী স্কুলের বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। স্কুল ভবনের পাশে স্থাপিত ক্রিকেট একাডেমির জিনিসপত্র, ভবনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর ছবি, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। বাধা দিতে গেলে স্কুলের নৈশপ্রহরীসহ পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের ওপর হামলা চালায়। এতে নৈশপ্রহীরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
এ ঘটনায় স্কুলের নৈশপ্রহরী মোহাম্মদ সেলিম বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলায় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, হাটহাজারীর মদুনাঘাট শাখার কর্মকর্তা শাহেদুল ইসলামসহ ৮ জনকে সুনির্দিষ্ট এবং আরও ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন-আবদুল করিম (৪৫), মানিকুল ইসলাম (২৮), আনোয়ারুল ইসলাম আনু (২৬), হোসনে আরা ওরফে বোচনি, নুরুল আবছা (৫৪), শাহ আলম (৫৬) ও নুরুল ইসলাম (৫৮)।