দেশের ৭৮ শতাংশ শিক্ষিত তরুণ মনে করে তারা চাকরি উপযোগী শিক্ষা পায়নি। মোট জনসংখ্যার তিনভাগের একভাগ তরুণ হলেও তারা যুগোপযোগী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পাচ্ছে না। শিক্ষার সঙ্গে চাকরির বাজারের চাহিদা না মেলায় উচ্চ ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের এক যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। ‘অ্যাড্রেসিং ভারনাবিলিটি অব ইউথ ইন বাংলাদেশ : পলিসি অ্যান্ড রিসোর্স অ্যালোকেশন’ শীর্ষক সেমিনারে বুধবার এটি প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাকিল আহমেদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বক্তব্য দেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
শাকিল আহমেদ বলেন, গবেষণায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ইয়ুথ সার্ভে-২০১৮-এর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দেশের মোট যুব শ্রমশক্তির মধ্যে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ কর্মে রয়েছে। ১৫-১৯ বছর বয়সিদের মধ্যে ৭ শতাংশ, ২০-২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২৫-২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ কাজে আছে। অন্যদিকে কর্মহীন যুব শক্তি হচ্ছে মোট বেকার জনসংখ্যার ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ। উচ্চশিক্ষত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। যেমন মাধ্যমিক পাশ করা যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২৮ শতাংশ। এছাড়া উচ্চমাধ্যমিক পাশ করাদের মধ্যে ২২ দশমিক ৩ শতাংশ বেকার। টারশিয়ারি পর্যায়ে শিক্ষিতদের মধ্যে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ, প্রাথমিক পাশ করাদের মধ্যে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অশিক্ষিতদের মধ্যে ৪ শতাংশ বেকার। ড. সেলিম রায়হান বলেন, জনমিতির যে সুযোগ বাংলাদেশের হাতে আছে, তা কাজে লাগাতে হবে। এজন্য তরুণদের যুগোপযোগী শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষায় বাজেট বাড়াতে হবে। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বাস্তাবায়নে ঘাটতি আছে। আমরা আর ১৫ বছর জনসংখ্যা বোনাসকালের সুবিধা পেতে পারি। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য একটা কৌশলপত্র তৈরি করে কাজ করতে হবে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, সরকার অবকাঠামো খাতে অনেক উন্নতি করেছে। বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে। এখন শিল্পকারখানা তৈরি হচ্ছে।
সেগুলোয় কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। চাকরি না পাওয়ার আশঙ্কা আমি যখন কলেজে পড়ি, সেই থেকে শুনে আসছি। এটা থাকবেই। তবে যুগোপযোগী শিক্ষার ব্যাপারে কাজ করছে সরকার। তিনি জানান, সব দেশের সরকারই একটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য পলিসি গ্রহণ করে কাজ করে। পৃথিবীর কোনো দেশই গৃহীত পলিসি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারে না। সম্ভবও নয়। পরিবর্তন একদিনে আসে না। চোখের পলকে দেশকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। বিশ্বের কোনো দেশই পারেনি। সময়ের ব্যবধানে ধীরে ধীরে একটি দেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছে।অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, যুবকদের জন্য সরকারের অনেক কর্মসূচি নেওয়া আছে; কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমাদের দরকার কেন প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, তা চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। গ্রামীণ পর্যায়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বাড়াতে হবে।