পিরোজপুরের ১৪ জন জাল সনদধারী শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে জেলার ১৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে আসছেন।এ শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর তাদের ফেরত দিতে হবে অবৈধভাবে বেতন বাবদ নেয়া ৯৭ লাখ টাকা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে ওই ১৪ জন শিক্ষকসহ সারাদেশের মোট ৬৭৮ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সহকারী সচিব (অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শাখা) মো. সেলিম শিকদার স্বাক্ষরিত এক আদেশে বিষয়টি জানা গেছে।
জানা গেছে, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) যাচাইবাছাই করে সারাদেশে ৬৭৮ জন শিক্ষক কর্মচারীর জাল সনদ শনাক্ত করা হয়েছে। ওই জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারীদের তালিকার মধ্যে পিরোজপুরের ১৪ জন শিক্ষকের নাম আছে।
পিরোজপুরে যে ১৪ জন জাল সনদধারী শিক্ষক শনাক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১ জন বাদে সবাই এমপিওভুক্ত। তারা নিয়মিত সরকারি বেতন তুলছেন। জাল সনদে এমপিওভুক্ত ১৩ শিক্ষক বেতন বাবদ সরকারি তহবিল থেকে মোট ৯৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এদের মধ্যে পিরোজপুর সদর উপজেলার হুলারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) নাসিমা আক্তারকে ৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, রাজারকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) মো. মাসউদ আহসানকে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা, শতদশকাঠি সতীলক্ষ্মী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) লিটন রায়কে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, বাবলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) বিপুল কুমার রায়কে ৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, সিকদার মল্লিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) শিউলি রানী হালদারকে ৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, মঠবাড়িয়া উপজেলার ডা. রুস্তম আলী ফরাজি কলেজের প্রভাষক (কম্পিউটার) মাসুমা পারভীনকে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) সাজেদা পারভীন তুলিকে ৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, তুষখালী ইউনিয়ন তোফেল আকন মেম. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মো. মাসুদ রানাকে ৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা, ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া রাজপাশা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) সীমা রানীকে ৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা, নেছারাবাদ উপজেলার সেহাংগল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) সুচিত্র কুমার হালদারকে ৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, নাজিরপুর উপজেলার চাঁদকাঠি আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) প্রিয়াংকা হালদারকে ১১ লাখ ৪ হাজার টাকা, বৈঠাকাটা কলেজের প্রভাষক (বাংলা) মোছা. কহেতুবকে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকা, নাওটানা বি এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) মনি মন্ডলকে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর জাল সনদধারী ননএমপিও শিক্ষক হলেন পশ্চিম সোহাগদল শহীদ স্মৃতি বি এম কলেজের প্রভাষক(ইতিহাস) শরিফা ইয়াসমিন।
এসব জাল সনদধারী শিক্ষক বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের এমপিও বন্ধ করা এবং অবৈধভাবে এমপিও বাবদ ভোগ করা লাখ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে।এছাড়াও যারা অবসরে গেছেন তাদের অবসরের সুবিধা প্রাপ্তি বাতিল করা ও যারা স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন তাদের আপত্তির টাকা অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলাও করতে হবে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। জাল সনদধারী শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরকে বলেছে মন্ত্রণালয়।
মঠবাড়িয়া উপজেলার ডা. রুস্তম আলী ফরাজি কলেজের জাল সনদধারী প্রভাষক মোসাম্মদ মাসুমা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ওই কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহ আলম আল মারুফ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান,আমাদের কলেজের প্রভাষক মোসাম্মদ মাসুমা পারভীনের জাল সনদের বিষয়টি শুনেছি। তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পিরোজপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী আযিযী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। জাল সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কাগজপত্র পাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।