সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার পনুর্বহাল চেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। তারা বলেন, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ছিনিয়ে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এ জন্য তারা ষড়যন্ত্র করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা ব্যবস্থা তুলে নিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা প্রশ্নবিদ্ধ করতেও পিছপা হয়নি তারা। এ অবস্থায় সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পনর্বহাল করতে হবে।
একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সরকার গঠনে মুক্তিযুদ্ধের ধারা অব্যাহত এবং অসাম্প্রদায়কি বাংলদেশ সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত আলোচনাসভা ও সংগঠনের জেলা কনভেনশনে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এসব কথা বলেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচয়িতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম।
আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম (এসপি মাহবুব), বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের শব্দসৈনিক ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম রেজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা কনভেনশন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাসুদ রানা মিন্টু, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাকসুদা সুলতানা ঐক্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলাম, জেলা কনভেনশন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব গোলাম রব্বানী হীরুসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
এরপর আলোচনাসভায় বক্তব্য দেন আগত অতিথিরা। মূল অনুষ্ঠান শেষে দ্বিতীয় পর্বে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের জেলা কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর বীরপ্রতীক বলেন, ‘১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। রণাঙ্গনে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। এ দেশ কারো দয়ায় আমরা পাইনি, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি।
রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা বাংলাদেশ নিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করবে সেটি আমরা হতে দেব না। দেশবিরোধীরা-স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাতের জন্য নানা রকম চেষ্টা চলছে। এই সময় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, ষড়যন্ত্রকারীদের সব ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল করে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ যেভাবে বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ জনতার মাঝে বক্তৃতা দিয়ে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, ঠিক সেভাবে আবার মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটাতে হবে। যেখানে উপস্থিত থেকে জাতিকে বঙ্গবন্ধুর মতো করে আবারও উদ্বুদ্ধ করবেন। তার আহ্বানে সামনের নির্বাচনে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে। একটি কথা সকলকে মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা না থাকলে আমরা কেউ থাকব না। তাই আমাদের সংগঠিত হতে হবে।
ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, বাঙালির অনেক ঐতিহ্য রয়েছে, গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে। সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয় হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। অথচ বিভিন্ন সময় আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে কলংকিত করা হয়েছে। আর এই কলংকের সূচনা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। ওই সময় মূল ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন খন্দকার মোশতাক। সে ইতিহাসের একজন খলনায়ক, মীরজাফর। নতুন প্রজন্মকে এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমরা দেশটিকে গড়ে দিয়েছি, নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এবারের নির্বাচন জাতির জন্য, দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটা স্বাধীন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা, এই দেশ শাসনও করবেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। তাই সামনের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যাতে জয়ী হয় সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।
মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বুদ্ধিভিত্তিক লড়াই করতে হবে। সুসংগঠিতভাবে রাজনৈতিক লড়াই করতে এবং সে লড়াইয়ে জিততে হবে। কোনো ব্যক্তি একা কিছু করতে পারে না, সকলকে সংগঠিত হয়ে পথ চলতে হবে। দেশে ও দেশের বাইরে বাংলাদেশ নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে দেশ ও সরকারবিরোধী যেসব কর্মকাণ্ড চলছে, সেগুলো প্রতিহত করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। দেশবিরোধী যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এখন সেগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের মোকাবেলা করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে। দেশবিরোধী কোনো শক্তিকে দেশের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। আর কোনো রাজাকারের গাড়িতে আমরা জাতীয় পতাকা দেখতে চাই না।
শব্দসৈনিক ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু না থাকলে আমরা বাংলাদেশ পেতাম না। বঙ্গবন্ধু আমাদের যে দেশ উপহার দিয়েছেন, সে দেশ নিয়ে কাউকে কোনো রকম ষড়যন্ত্র করতে দেব না আমরা। এখনই সময় মাঠে নামার।