দেশের বর্তমান সময়ে একটি আলোচিত বিষয় হলো সরকারি চাকরিতে প্রবেশর বয়সসীমা বৃদ্ধি। পাশাপাশি চর্চা হচ্ছে অবসরের বয়সসীমা নিয়েও। এই ইস্যুটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট (চাকরি প্রত্যাশী, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী) মহলে চলছে নানা গুঞ্জন। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি প্রয়োজন এটা সবাই মেনে নিলেও সেটা কত হওয়া প্রয়োজন তা নিয়ে চলছে বিভিন্ন মতামত। কেউ ৩২ বছরের পক্ষে, কেউ বা ৩৫ বছরের। আবার অনেকে আরো বেশি বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে দাবি উঠেছে চাকরি থেকে অবসরের যাওয়ার বয়সসীমা নিয়েও। এক্ষেত্রে আবার বিপরীতমুখী মতামত উঠে আসছে। বর্তমানে চাকরিরত অনেকে বয়সসীমা ৬৫ করার পক্ষে কেউ আবার ৬২ বছরকে যৌক্তিক মনে করছেন। আবার এক পক্ষ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির পক্ষে থাকলেও অবসরের বয়স বৃদ্ধিতে তাদের রয়েছে আপত্তি। কিন্তু পক্ষে বিপক্ষে কথাবার্তা, আলোচনা-সমালোচনা চললেও আমার মনে হয় তা শুধু আলোচনা সমালোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না, তাতে থাকতে হবে যুক্তি। আসুন তাহলে যুক্তিতে আসি.....একজন শিক্ষার্থীর মাস্টার্স শেষ করতে বয়স ২৫ এর বেশি হয়ে যায়। এসময় একাডেমি পড়াশোনার কারণে কারোর পক্ষে চাকরির জন্য ভালো প্রিপারেশন নেয়া হয়ে ওঠে না। তাই পার্ফেক্ট জব প্রিপারেশন নিতে আরো ২ বছর লেগে যায়। সুতরাং বয়স ২৭ বছর হয়ে যায় জব মার্কেটে প্রবেশ করতে। পড়াশোনা শুরু ৫ বছর থেকে শেষ ২৫ বছরে + প্রিপারেশন ২ বছর, তাই ২০+২= ২২ বছরের দীর্ঘ পড়াশোনা ও প্রিপারেশন শেষে মাত্র ৩ বছর আপনার অর্জিত সনদের মেয়াদ? কেনো এমনটা হবে?
আমরা যদি ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সক্ষমতা রাখি তাহলে চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কেনো টগবগে ৩০ বছর বয়সেই অযোগ্য হবো। আমার যোগ্যতা থাকলে আমি ৫৯ বছর ৩৬৪ দিন পর্যন্ত চাকরির চেষ্টা করবো।
তবে চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির একটা সমালোচনার একটা কারণ হতে পারে যে এতে করে করাপশন হবার সম্ভাবনা থাকবে। আর এজন্য প্রয়োজন চাকরি ক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূল করা। মাথা ব্যথা হলে মানুষ মাথা কেটে ফেলে না। তাহলে দুর্নীতি রুখতে প্রবেশ বয়সসীমা ৩০ বেঁধে রাখা মাথা কেটে ফেলার মত সিদ্ধান্ত নয় কী? আবার ৫৯ বছর ৩৬৪ দিন প্রবেশসীমাও বেমানান তাই জবে প্রবেশের বয়সসীমা অবশ্যই সর্বজন স্বীকৃতি হওয়া প্রয়োজন।
যারা সবেমাত্র পড়াশোনা শেষ করেছেন তারা নিজ স্বার্থে বয়সসীমা ৩০ বা ৩২ রাখার পক্ষে কথা বলবে। যার পেছনে কোনো লজিক নেই। কিন্তু কঠিন জব মার্কেটে হাবুডুবু খেয়ে নিজের বয়স তারা যখন শেষ করবে তখন তারাও বলবে ৩৫ বা ৪০ করা উচিত।
এবার আসি অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা প্রসঙ্গে। একটা সময় (আমাদের দাদা-বাবা-চাচাদের সময়, ধরতে পারেন এখন থেকে ৫-৭ বছর আগেও) মানুষ যখন এসএসসি/দাখিল পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশন করতেন তখন ২-৫/৭ বছর বা ১৯৭০/৮০ এর দিকে ১০ বছর পর্যন্ত বয়স কমানোর রীতি ছিলো। তাই এই যুগে এসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরিরতদের দেখলে মনে হয় ৫০+ হলেই তারা আর চলেন না। কিন্তু বর্তমানে প্রকৃত জন্মদিন আর সনদের জন্মের মধ্যে তেমন আর পার্থক্য নেই। আবার মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৪ বছরের বেশি হয়েছে। তাই অবসর সীমা কিছুটা বৃদ্ধি করা যৌক্তিক। সেটা একেবারে ৬৫ না হোক, ৬২ করা যেতে পারে, আর এই গড় আয়ু বৃদ্ধি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধিরও অন্যতম যৌক্তিক কারণ। তাই বর্তমানের চাকরি প্রত্যাশীদের দাবি মতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ই হবে সময়োপযোগী একটা সিদ্ধান্ত। যদি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর আর অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর করা হয় তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি কিয়ামত পর্যন্ত চাকরি ক্ষেত্রে বয়সসীমা নিয়ে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হবে না।
তাই কিছুটা সমালোচনা দেখা দিলেও আমার মনে হয় ৩৫ এবং ৬২ করা হলে এটা সর্বজন স্বীকৃত হবে। ৩৫ এবং ৬২ এর বিপক্ষে কোনো লজিক কেউ দেখাতে পারবে না, যারা এর বিরোধিতা করছেন বিষয়টা শুধু তাদের চিন্তা শক্তির জড়তা ছাড়া কিছু না। (আমরা বাঙালিরা ভাল-মন্দ কোনো পরিবর্তনই প্রথমে মানতে পারি না, আমরা গতানুগতিক ভাব-ধারার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত)।
তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অবশ্যই কমপক্ষে ৩৫ করতে হবে। (বিশেষ ক্ষেত্রে +২ অর্থাৎ ৩৭ রাখা যেতে পারে)। পাশাপাশি অবসরের বয়সসীমা ৬২ করার বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন।
লেখক: শিক্ষক