চার্লস ডারউইনের জন্মদিন আজ

আমাদের বার্তা ডেস্ক |

বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন এর আজ জন্মদিন। তিনিই সর্বপ্রথম অনুধাবন করেন যে সকল প্রকার প্রজাতিই কিছু সাধারণ পূর্বপুরুষ হতে উদ্ভূত হয়েছে এবং তার এ পর্যবেক্ষণটি সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। বিবর্তনের এই নানান শাখা-প্রশাখায় ভাগ হবার বিন্যাসকে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেন। তার জীবদ্দশাতেই বিবর্তনবাদ একটি তত্ত্ব হিসেবে বিজ্ঞানী সমাজ ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষের কাছে স্বীকৃতি লাভ করে, তবে ১৯৩০ থেকে ১৯৫০ এর মধ্যে বিকশিত আধুনিক বিবর্তনিক সংশ্লেষের মাধ্যমে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক নির্বাচনের গুরুত্ব পূর্ণরূপে অনুধাবন করা সম্ভব হয়। পরিবর্তিত রূপে ডারউইনের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছিলো জীববিজ্ঞানের একত্রীকরণ তত্ত্ব, যা জীববৈচিত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করে।

চার্লস রবার্ট ডারউইন ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারের শ্রিউসবারিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ধনী সমাজের গন্যমান্য ডাক্তার এবং অর্থব্যবস্থাপক রবার্ট ডারউইন এবং সুজানা ডারউইন এর ছয় সন্তানের মধ্যে পঞ্চম। 

ডারউইন ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালীন একজন শিক্ষানবিশ ডাক্তার হিসেবে তার পিতাকে শ্রপশায়ারের দরিদ্রদের চিকিৎসা সেবা দিতে সাহায্য করেছিলেন। ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে তার ভাই ইরাসমাসের সঙ্গে এডিনবার্গ মেডিক্যাল স্কুলে (সেই সময়ে যুক্তরাজ্যের সেরা মেডিকেল স্কুল) যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখেন। মেডিক্যাল স্কুলের বক্তৃতাগুলো ডারউইনের কাছে নিস্তেজ মনে হয় এবং শল্যচিকিৎসা বিরক্তিকর বলে মনে করেছিলেন, তাই তিনি তার পড়াশুনাকে অবহেলা করেছিলেন। 

চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা ও পড়াশোনায় ডারউইনের অবহেলায় তার পিতা বিরক্ত হন। তিনি তাকে খ্রিস্টের কলেজ, কেমব্রিজে পাঠান ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি লাভের জন্য যাতে করে তিনি একজন অ্যাঙ্গলিকান কান্ট্রি পারসন হতে পারেন। ডারউইন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান-বিতরণী পরীক্ষায় অযোগ্য ছিলো ফলে তিনি জানুয়ারী ১৮২৮ এ সাধারণ ডিগ্রি কোর্সে যোগদান করেন। পড়াশোনার চেয়ে তিনি ঘোড়ায় চড়া ও শুটিংকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত ডারউইনকে কেমব্রিজে থাকতে হয়েছিলো। 

প্রকৃতির প্রতি ডারউইনের গভীর আগ্রহের কারণে তিনি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়নে মনোযোগী ছিলেন না; বরং তিনি সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন। অতঃপর ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন তার মধ্যকার প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের আগ্রহকে অনুপ্রাণিত করে। এইচ এম এস বিগলে তার পাঁচ বছরব্যাপী যাত্রা তাকে একজন ভূতাত্ত্বিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং বিগলের ভ্রমণকাহিনী প্রকাশিত হলে তা তাকে জনপ্রিয় লেখকের খ্যাতি এনে দেয়।

ভ্রমণকালে তার সংগৃহীত বন্যপ্রাণ ও ফসিলের ভৌগোলিক বণ্টন দেখে কৌতূহলী হয়ে ডারউইন প্রজাতির ট্রান্সমিউটেশান নিয়ে অনুসন্ধান করেন এবং ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদটি দানা বেঁধে উঠতে শুরু করে। যদিও তিনি তার এ ধারণাটি নিয়ে কিছু প্রকৃতিবিদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন, তার বিস্তারিত গবেষণা কাজের জন্যে আরো সময়ের প্রয়োজন ছিলো এবং তাকে তার প্রধান ক্ষেত্র ভূতত্ত্ব নিয়েও কাজ করতে হচ্ছিলো। তিনি তার তত্ত্বটি লিখছিলেন যখন ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস তাকে একই ধরনের চিন্তাভাবনা সংবলিত একটি প্রবন্ধ পাঠান, যার ফলে অনতিবিলম্বে তাদের উভয়ের তত্ত্ব যৌথভাবে প্রকাশিত হয়। ডারউইনের তত্ত্ব কিছু পরিবর্তিত হয়ে প্রকৃতিতে বহুল বৈচিত্রের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করে। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মানব বিবর্তন এবং যৌন নির্বাচন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন এবং মানুষের ক্রমনোন্নয়ন, ও তারপর পরই মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীতে অনুভূতির প্রকাশ নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। বৃক্ষ নিয়ে তার গবেষণা কয়েকটি গ্রন্থে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং তার শেষ বইতে তিনি কেঁচো এবং মাটির ওপর এদের প্রভাব নিয়ে তার গবেষণা প্রকাশ করেন।

ডারউইন চাপের মধ্যে কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। ২০ সেপ্টেম্বর তিনি ‘হৃদযন্ত্রের অস্বস্তিকর ধড়ফড়ানিতে’ আক্রান্ত হন, তাই তার চিকিত্সকরা তাকে ‘সমস্ত কাজ বন্ধ করে’ এবং কয়েক সপ্তাহের জন্য দেশে থাকতে অনুরোধ করেছিলেন। 

এই মারাত্মক চাপের ফলে তিনি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন এবং জুনের মধ্যেই তিনি পেটের সমস্যা, মাথা ব্যথা এবং হার্টের অসুবিধার লক্ষণগুলি দেখতে পান। তিনি শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকদিন ধরে বিছানায় শায়িত ছিলেন। এরপর থেকে সারাজীবনই, তিনি বার বার পাকস্থলীর ব্যথা, বমি বমি ভাব, গুরুতর ফোঁড়া, বুক ধড়ফড়ানি, কাঁপুনি এবং অন্যান্য উপসর্গগুলিতে ভুগতে থাকেন।

১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ এপ্রিল বিখ্যাত এই জীববিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন। ডারউইনের বিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতির কারণে তিনি ছিলেন ১৯ শতকের মাত্র পাঁচজন রাজপরিবারবহির্ভূত ব্যক্তিদের একজন যারা রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সম্মান লাভ করেন। ডারউইনকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে সমাহিত করা হয়, বিজ্ঞানী জন হার্শেল ও আইজ্যাক নিউটনের সমাধির পাশে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
বর্তমানে ছাত্রদের নেতৃত্ব দেয়ার কেউ নেই: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha বর্তমানে ছাত্রদের নেতৃত্ব দেয়ার কেউ নেই: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী শিক্ষাখাতের নতুন তদবিরবাজ তিতাস! - dainik shiksha শিক্ষাখাতের নতুন তদবিরবাজ তিতাস! শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে: সমন্বয়ক হান্নান - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে: সমন্বয়ক হান্নান তদন্ত রিপোর্ট না দিয়েই সটকে পড়ছেন শিক্ষা পরিদর্শকরা - dainik shiksha তদন্ত রিপোর্ট না দিয়েই সটকে পড়ছেন শিক্ষা পরিদর্শকরা বরখাস্ত হচ্ছেন শিক্ষা বোর্ডের সেই সচিব নারায়ণ নাথ - dainik shiksha বরখাস্ত হচ্ছেন শিক্ষা বোর্ডের সেই সচিব নারায়ণ নাথ আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা - dainik shiksha আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024569034576416