বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক কলেজছাত্রকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের সহপাঠী ও স্বজনদের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দাবি করছেন- তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তবে রোগীর স্বজনরা বলছেন, কলেজছাত্রের মৃত্যুর পর কান্নারত স্বজন ও সহপাঠীদের মারধর করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
শনিবার (১১ জুন) বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ তলার সার্জারি-১ ইউনিটে এ ঘটনা ঘটে।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, ঘটনা তদন্তে হাসপাতালে রয়েছি। হাসপাতালের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলার প্রমাণ পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ইসলামিয়া কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের তিন বন্ধু রিয়াদ হোসেন, হৃদয় ও ওসমান গনি মিলে দুপুর ১২টার দিকে কলেজের সামনে থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে শহরের উপকণ্ঠ তালতলী এলাকায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মহাবাজ এলাকায় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। সড়কের বাইরে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন তারা। সেখান থেকে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে দুপুর দেড়টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক বেলতলা এলাকার মৃত আনসার আলীর ছেলে রিয়াদ হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন।
রিয়াদের স্বজন মাসুদ ও তনু বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা একজন একজন করে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। আমরা বারবার বলছিলাম রিয়াদের অবস্থা বেশি খারাপ, কিন্তু তারা সেই কথা শোনেননি। তারা রিয়াদকে চিকিৎসা দেওয়া শুরুই করতে পারেননি। যথাযথ সময়ে চিকিৎসা না দেওয়ায় রিয়াদ মারা যায়। রিয়াদের মৃত্যুর পর ওর সঙ্গে আসা বন্ধুরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং ওই সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। এর কিছুক্ষণ পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এসে কান্নারত রোগীর স্বজনদের ওপর হামলা চালান এবং মারধর করেন।
হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাকিন আহমেদ বলেন, আমরা হাসপাতাল পরিচালকের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছি। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আমরা কর্মবিরতিতে যাব।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে ভর্তি করা তিনজনের মধ্যে একজন প্রচুর রক্তক্ষরণে মৃত্যুবরণ করেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার সহপাঠীরা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা পুলিশের উপস্থিতিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিয়ে বসেছি। আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিব।