চিকিৎসার অভাবে বাবা হারানো তিন যমজ ভাইয়ের মেডিক্যালে চান্স

দৈনিক শিক্ষাডটকম, বগুড়া |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, বগুড়া : বগুড়ার ধুনট উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামের তিন যমজ ভাই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তাদের এক ভাই গত বছর এবং অপর দুই ভাই এবার চান্স পেয়েছেন।

হঠাৎ স্বামীকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন আর্জিনা। তবে ভেঙে পড়েননি তিনি। জীবন যুদ্ধে হারবার পাত্র নন তিনি। সংকল্প করেন যে করেই হোক সন্তানদের পড়াশোনা করাবেন। মানুষের মত মানুষ করবেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে তিন ছেলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। সন্তানদের এমন সাফল্য আনন্দাশ্রুতে ভাসিয়েছে আর্জিনা বেগমকে। শুধু আর্জিনা নন। খুশিতে ভাসছে পুরো পুরো ধুনট।

মেডিক্যালে সুযোগ পাওয়া তিন জমজ ভাই হলেন- মাফিউল হাসান, সাফিউল হাসান এবং রাফিউল হাসান।

ধুনট নবির উদ্দিন পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন তিন ভাই। এর পর একসঙ্গে মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায় আসেন। তবে প্রথমবার সাফল্য পান মাফিউল। তিনি ভর্তি হন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে। আর চলতি বছর সাফিউল দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজে ও রাফিউল নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়েছেন।

ছবি: সংগৃহীত

মাফিউল হাসান বলেন, তিন ভাই বগুড়ায় মেসে একই সঙ্গে থেকে সরকারি শাহ সুলতান কলেজে পড়েছি। মা কষ্ট করে এবং জমি বিক্রি করে পড়ালেখা করিয়েছে। কখনোই আমাদের কষ্ট করতে দেয়নি।

শাফিউল হাসান বলেন, ‘আজ বাবা থাকলে অনেক খুশি হত। বাবাকে হারিয়েছি শিশুকালে। এখন মাই বাবার অভাব পূরণ করছে। মানুষের সেবা করার জন্য যাতে চিকিৎসক হতে পারি এই দোয়া চাই সবার কাছে।

রাফিউল ইসলাম বলেন, অসুস্থ অবস্থায় বাবা মারা যান। যখন বুঝতে পারলাম বাবার সেই কথা তখন থেকেই তিন ভাই প্রতিজ্ঞা করি ডাক্তারি পড়বো। মানবতার তাগিদে গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা করবো। এই গ্রাম থেকে কেউ আগে মেডিক্যালে চান্স পায়নি। আমরা এক পরিবার থেকে তিনজন মেডিক্যালে চান্স পেয়েছি। এটা একদম অবিশ্বাস্য।

মা আর্জিনা বেগম বলেন, তিন ছেলের জন্ম হয়েছে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ওদের বাবা হৃদরোগের মারা যান। ওদের বয়স তখন পাঁচ বছর। ওরা বাবার স্নেহ-মমতা পায়নি। তিনি মারা যাওয়ার পর তিন সন্তানকে পড়ালেখা করানো নিয়ে বিপাকে পড়ি। নিজে কষ্ট করে এবং জমি বিক্রি করে ওদের পড়ালেখা করিয়েছি। প্রায় পাঁচ বিঘা জমি ছিলো। ওদের পড়াশোনার খরচের জন্য বাবার বাড়ির জমিও বিক্রি করেছি। বাকি যা আছে তাও প্রয়োজনে বিক্রি করবো। তবুও ওদের চিকিৎসক বানাবো। যাতে আমাদের মত গরিব মানুষদের সেবা করতে পারে।

তাদের এই সাফল্য ছুঁয়ে গেছে স্থানীয়দের। তিনভাইকে নিয়ে এখন গর্বের শেষ নেই এলাকাবাসীর। তাদের নিয়ে গর্ব করছেন শিক্ষকরাও। কান্না জড়িত কণ্ঠে শিক্ষক গোলাম রব্বানী বলেন, এরা তিন ভাই মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। আমি চাইব তারা যেন দেশ ও দশের কল্যাণে দাঁড়াতে পারে এই দোয়া করি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003572940826416