চেঙ্গিসের সমাধির খোঁজে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

এক সময় কাস্পিয়ান সাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অবধি সাম্রাজ্য ছিলো তাঁর দখলে। মৃত্যুর পর তাই ‘একটু শান্তি’ চেয়েছিলেন মঙ্গোল সম্রাট চেঙ্গিস খান। মৃত্যু আসন্ন বুঝে অনুগত সেনাদের নাকি বলে গিয়েছিলেন, তাঁর সমাধিস্থল যাতে চিরকাল গোপন থাকে। কখনো কেউ যেনো পৌঁছুতে না পারে সেখানে। সৈন্যরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল সে নির্দেশ। মৃত্যুর পর প্রিয় সম্রাটকে কাঁধে করে নিয়ে গিয়েছিলেন অনুগত সেনারা। পথে যাঁরা তাঁদের দেখেছিলেন, তাঁদের খুন করা হয়েছিল। যাতে গোপন স্থান গোপনই থাকে।

মনে করা হয়, মঙ্গোলিয়ার মরু অঞ্চলে সমাধিস্থ করা হয়েছিল চেঙ্গিসকে। সমাধিস্থান যাতে কেউ শনাক্ত করতে না পারে, তাই তার উপর দৌড় করানো হয়েছিল এক হাজার ঘোড়াকে।

বিদেশি গবেষক, বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর চেঙ্গিসের সমাধি খোঁজার চেষ্টা করেছেন। অভিযান চালিয়েছেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলও অভিযান চালিয়েছিল। উপগ্রহচিত্র তুলে খোঁজার চেষ্টা চালিয়েছিল তারা। কিন্তু ১২২৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে অধরাই থেকেছে সেই সমাধি।

মঙ্গোলিয়ার নোটে, ভদকার বোতলে এখনো রয়েছে তাঁর ছবি। মঙ্গোলিয়ার প্রায় প্রতি ঘরে তাঁর ছবি রয়েছে। কিন্তু সম্রাটের সমাধি খোঁজার বিষয়ে মঙ্গোলীয়দের প্রবল অনীহা। 

৮০০ বছর পরেও চেঙ্গিস খানের সমাধি যে খুঁজে পাওয়া যায়নি, তার নেপথ্যে সম্রাটের ইচ্ছা ছাড়াও অন্য কারণ রয়েছে। সেই কারণ হল দুর্গমতা। গ্রেট ব্রিটেনের যা আয়তন, মঙ্গোলিয়া তার থেকে সাত গুণ বড়। অথচ ব্রিটেনে মোট যত কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে, তার মাত্র দুই শতাংশ রয়েছে এখানে। জনসংখ্যাও কম এই দেশে। সেই কারণে চেঙ্গিসের সমাধি খোঁজা যায়নি।

মঙ্গোলদের প্রাচীন সমাধি নিয়ে গবেষণা করছেন আর্ডেনেবাটার। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি মঙ্গোলিয়ার মধ্যভাগে আরখানগাই প্রদেশে ২০০০ বছরের পুরনো বহু সমাধি খনন করিয়ে চলেছেন।

আর্ডেনেবাটার মনে করেন, ওই সমাধিগুলি জিয়োঙ্গনুদের। এই জিয়োঙ্গনুরা চেঙ্গিসের পূর্বসূরি। চেঙ্গিস নিজেও তাই বলতেন। বিজ্ঞানী মনে করেন, চেঙ্গিসের সমাধিও এই জিয়োঙ্গনু সম্রাটদের সমাধির মতো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাটির ২০ মিটার গভীরে জিয়োঙ্গনু সম্রাটদের সমাধিস্থ করা হতো। কাঠের কফিনে রাখা থাকত দেহ। মাটির উপরে বসানো হতো চৌকো পাথর। তা দিয়েই শনাক্ত করা হতো, কার সমাধি। সেই পাথর যদি কোনোভাবে এক বার সরে যেতো, তা হলে সমাধি খুঁজে বার করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ত। চেঙ্গিসের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল বলে মনে করেন গবেষকরা।

গবেষকরা আরো মনে করেন, চেঙ্গিসের সমাধিতে রাখা আছে দামি জিনিসপত্র। যতো দেশ জয় করেছিলেন চেঙ্গিস, সেই সব দেশের স্মারক রাখা রয়েছে তাঁর সমাধিতে। সে কারণেই সেই সমাধি খোঁজার চেষ্টা করে চলেছেন গবেষকরা।

প্রসঙ্গত, চেঙ্গিসের জন্যই সিল্ক রুটে ব্যবসা, বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। কূটনীতিকরা আজ যে রক্ষাকবচ পান, এই ধারণা চালু করেছিলেন চেঙ্গিসই। ধর্মীয় স্বাধীনতার হয়ে সওয়াল করতেন তিনি।

কাস্পিয়ান সাগর থেকে প্রশান্ত সাগরের মাঝে বিশাল ভূখণ্ড ছিলো চেঙ্গিসের দখলে। এই বিশাল ভূখণ্ডের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা হবে কী ভাবে? চেঙ্গিসই ডাক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। চেঙ্গিস প্রথম মুদ্রা হিসাবে কাগজের নোট চালু করেন।

সূত্র: আনন্দবাজার 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025060176849365