চোখে না দেখলেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন নাঈম

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাবি : চোখে না দেখলেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রাজশাহী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাঈম হোসাইন। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের মো. কবির হোসেনের ছেলে। দুই ভাই একবোনের মধ্যে নাঈম হলেন সবার ছোট। গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি ও লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হোন তিনি। নিজের সাথে সংগ্রাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত আসতে হয়েছে তাকে।

নাঈম হোসাইনের তিন ভাইবোন সকলেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। শারীরিক প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে তিনজনেই ছুটে চলেছেন তাদের স্বপ্ন পূরণে। তিনজনই পড়াশোনা করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। বড় ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ২০-২১ সেশনে পড়াশোনা করছেন। জন্মের পর থেকেই কেউ কাউকে দেখতে পায়নি তারা। নাঈম হোসাইনের বাবা কবির হোসেন ছিলেন সৌদি প্রবাসী। গত দু’বছর আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি দিনমজুর হিসেবে কর্মরত। 

নাঈম হোসাইন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫১ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী। নাঈম জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের সহযোগিতায় তাকে চলাফেরা করতে হয়। মোবাইলে স্ক্রিন রিডার অ্যাপসের মাধ্যমে সবার সাথে যোগাযোগ করেন এবং মোবাইলে পিডিএফ বই পড়ে থাকেন। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সকল কাজ তিনি একা করতে পারেন। কারো সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে না। তবে নতুন কোনো স্থানে গেলে তাকে প্রথমে একবার দেখিয়ে দিতে হয়।

তিনি বলেন, আমি মোবাইলে স্ক্রিন রিডার অ্যাপসের মাধ্যমে পড়াশোনা করে থাকি। আর পরীক্ষাগুলোতে বিভাগের জুনিয়র কিংবা অন্য বিভাগের বন্ধু বা জুনিয়র কাউকে শ্রুতিলেখক হিসেবে নিয়ে আসি। আমি তাদের মুখে বলি, আর তারা লিখে দেয়। আমার বই পড়তে খুব ভালো লাগে। তাই আমি মোবাইলে পিডিএফ এর বইগুলো পড়ে থাকি। কিন্তু পিডিএফে সকল বই পাওয়া যায় না, এ বিষয়টি আমাকে খুব কষ্ট দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার স্বপ্ন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার মা আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলো এবং আমার শিক্ষাগুরু বোরহান উদ্দিন ভূঁইয়া, যিনি আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। পাশাপাশি এখনো আমি স্যারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে উপদেশ নিয়ে থাকি। তিনি নিজেও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। আমার এক বড়ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিলো, তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। তখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করি এবং আমার লক্ষ্যই ছিলো কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে পড়তে হবে। ভবিষ্যতে নিজেকে একজন কলেজের শিক্ষক হিসেবে দেখতে চাই। পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করার স্বপ্ন দেখছি। আল্লাহ সহায় হলে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করবো ইনশাআল্লাহ।

নাঈম প্রসঙ্গে ইতিহাস বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহমুদা খাতুন বলেন, নাঈম হোসাইন অসম্ভব মেধাবী একটি ছেলে। জন্ম থেকেই সে অন্ধ তবুও আল্লাহ তাকে অনেক মেধা দিয়েছেন। বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্লাসের বাইরেও তাকে নার্সিং করে থাকি। আমি বিশ্বাস করি নাঈম একদিন ভালো কিছু করবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031700134277344