ছাগলকাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান বউদের নামে অঢেল সম্পত্তির হিসাব কর ফাইলে দেখালেও নিজের ফাইল রেখেছেন ছোট করে। তার কর ফাইলে মাত্র ২০ কোটি টাকার সম্পদের হিসাব রয়েছে। আর প্রথম স্ত্রীর কানাডা প্রবাসী মেয়ে ফারজানা রহমান ইপসিতার ফাইলে মিলেছে প্রায় ৪২ কোটি টাকার তথ্য। আসলে বাস্তবে কত টাকার মালিক বাপ-মেয়ে। এ ছাড়া প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের কর ফাইলে রয়েছে শতকোটি টাকার সম্পদ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কালবেলা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনটির বিস্তারিত: মতিউর রহমানের কর ফাইলের তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, মতিউর অঢেল সম্পত্তি গড়ে তুললেও কৌশলে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিজের কর ফাইল রেখেছেন খুবই ক্লিন। আর এই ফাইলে ক্যাশ টাকা থেকে শুরু করে সম্পদের পরিমাণ খুবই কম প্রদর্শন করেছেন। সব মিলে মাত্র ২০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য প্রদর্শন করেছেন। তার ফাইলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন মাত্র ৮২ লাখ টাকা। আর লায়লা কানিজের মৎস্য খামারে তার দেওয়া লোন দেখানো হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। আর ক্যাশ ইন হ্যান্ড হিসেবে দেখিয়েছেন ১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া অকৃষি খাতে তার বিনিয়োগ দেখিয়েছেন। তবে তার মেয়ের কর ফাইলে প্রায় ৪২ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য মিলেছে। এ ক্ষেত্রে কানাডা প্রবাসী মেয়ে ফারজানা রহমান ইপসিতার কর ফাইলে কোম্পানি ও শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান দেখিয়েছেন। এর মধ্যে তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান সিনার্জি ট্রেডিংয়ে তার শেয়ার রয়েছে ৫০ হাজার। যার মূল্য দেখিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। আর ভালুকায় অবস্থিত গ্লোবাল সু কোম্পানিতে তার শেয়ার দেখিয়েছেন ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ শেয়ার। এতে ১০ টাকা মূল্য হিসাবে দাম দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। আর নরসিংদীর রায়পুরার ওয়ান্ডার পার্কে দেখিয়েছেন ১ লাখ শেয়ার। সেখানেও ১০ টাকা হিসাবে দাম দেখিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া মামুন এগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানিতে রয়েছে ইপ্সিতার ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৯ শেয়ার। যার দাম দেখিয়েছেন ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯০ টাকা। এ ছাড়া বড় বিনিয়োগ রয়েছে সোনালী সিকিউরিটিজে। এই প্রতিষ্ঠানে ইপ্সিতার রয়েছে ১৫ লাখ শেয়ার। যার মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর অকৃষি খাতের সম্পদ হিসেবে আয়কর ফাইলে বেশ কিছু বাড়ি ও জমির বিষয় উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে গাজীপুরে ৫ লাখ টাকার জমি দেখানো হলেও সেখানে কোনো স্থান বা মৌজার নাম উল্লেখ করেননি মতিউরকন্যা ইপ্সিতা। আর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৫ কাঠা জমির ওপর রয়েছে একটি বাড়ি। যার মূল্য দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর নরসিংদীর রায়পুরায় রয়েছে ৪০ কাঠা জমি। যার দাম দেখিয়েছেন সাড়ে ৩ কোটি টাকা। আর তার নানার বাড়ি মোড়জালে ৩৯ ডেসিমেল জমি পেয়েছেন হেবা দলিলের মাধ্যমে। আরও ১০৮ ডেসিমেল জমি নরসিংদীর শিবপুরে তার রয়েছে। এই জমিও হেবার মাধ্যমে পেয়েছেন। অর্থাৎ দানের মাধ্যমে। যার কারণে আয়কর নথিতে এই জমির মূল্য দেখাতে হয়নি। এ ছাড়াও গাজীপুরে ৪ দশমিক ৯৫ ডেসিমেল জমি রয়েছে। যার বাজার মূল্য উল্লেখ করেছেন ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া নীলক্ষেতে কার পার্কিংসহ ১ হাজার ৫০৩ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন। যার মূল্য দেখিয়েছেন ৬০ লাখ ৬০ হাজার ৩২০ টাকা। এ ছাড়া ৩ কোটি ৩৯ লাখ ২৭ হাজার ৮২৯ টাকার ভ্যারিয়াস ল্যান্ড বা বিভিন্ন ধরনের জমি রয়েছে বলেও কর ফাইলে উল্লেখ করেছেন। আরও দুটি জমি দেখিয়েছেন নরসিংদী রায়পুরা এবং শিবপুর উপজেলায়। এর মধ্যে রায়পুরায় রয়েছে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ আর শিবপুরে ৮ শতাংশ। এই দুই জমির মধ্যে রায়পুরার জমির দাম দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা আর শিবপুরের জমির দাম দেখিয়েছেন ৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এর বাইরেও সম্পত্তি থাকতে পারে বলেও ধারণা কর কর্মকর্তাদের।
সূত্র আরও জানায়, মতিউর রহমানের নিজের নামে না হলেও তার প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে বিপুল সম্পত্তির সন্ধান মিলছে। তারা শত কোটি টাকার সম্পদ গড়ে নিয়েছেন। আর প্রথম স্ত্রীর মেয়ে ইপ্সিতা এই সম্পত্তি আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন। কানাডায় তার কী পরিমাণে সম্পদ রয়েছে বা তিনি যে বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করছেন, তার আদৌও কোনো হিসাব আছে কি না, জানে না কেউ। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআর। এরই আলোকে তাকে এনবিআরের কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার সব নথি দুদকে সরবরাহ করেছে এনবিআর। এ ছাড়া মতিউর রহমানের আয়কর নথির বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে এনবিআর। আর অসংগতি সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে পারে এনবিআর বলেও নিশ্চিত করেছেন একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।