ছাত্র কেনো প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে!

মাছুম বিল্লাহ, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

কুমিল্লার দেবীদ্বারে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি নিয়ে তার কক্ষে গিয়ে তার চেয়ারে বসে পড়েন দশম শ্রেণির এক ছাত্র। তার চেয়ারে বসে থাকার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দেবীদ্বার উপজেলার মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসা ছা্ত্রের নাম ইকরামুল হাসান।  

দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রকাশিত  সংবাদে বলা হয়, গত বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, কোনো শিক্ষার্থী যাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা প্রশাসনিক কোনো অনিয়ম হলে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে, শিক্ষার্থীদের ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন নেই। তাদের প্রধান কাজ লেখাপড়া করা, তারপরে প্রয়োজন কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালন করা। বিচার করা তাদের কাজ নয়। তারপরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলছে। এর পেছনের কারণ কি সেটি আমাদের গভীরভাবে দেখার সময় এসেছে। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগ করেন ও বিদ্যালয়ের অর্থে তিনি বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। দেবীদ্বারে দুটো বাড়ি করেছেন। তাই তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে। যদিও তিনি অবৈধ সম্পদ অর্জনের কথা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু, শিক্ষার্থীরা তাকে বিশ্বাস করেননি। তাই ঘেরাও করেছেন। খবর পেয়ে প্রথমে দেবীদ্বারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির সভাপতি নিগার সুলতানা সেনাবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। পরে বিকাল সাড় চারটার দিকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ না করেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। তিনি তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে পড়ার পর এক শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে পড়ে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। পরে অবশ্য ওই শিক্ষার্থী ফেসবুক থেকে তার ছবি সরিয়েও ফেলেন। পরে তিনি লেখেন, ‘আবেগে চেয়ারে বসে ছবি তুলি, এটা আমার ঠিক হয়নি। সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’ 

তার ভুল বুঝতে পারার জন্য এবং ক্ষমা চাওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, এ কেমন আবেগ! এ কেমন ধৃষ্টতা! 

শিক্ষকতা করে কোনো দলের প্রভাব খাঁটানো অবশ্যই আপত্তির। কিন্তু, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে পড়বেন এটি কেমন কথা।  আমাদের সংস্কৃতিতে তো এমনটা নেই। 

আমরা দেখছি, দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এ ধরনের ঘটনা বহু অঞ্চলে, বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটে চলেছে। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে জানা যায়, অনেক প্রতিষ্ঠানে নিজের সহকর্মীরা অনেক সুযোগ বুঝে শিক্ষার্থীদের লেলিয়ে দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক কিংবা অন্য কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে শুধু নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য। এতে একদিকে যেমন শিক্ষকদের দলাদালি আর স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিবেক বিসর্জন দেয়ার চিত্র সামনে চলে আসছে, অন্যদিকে সামান্য লাভের আশায় কোনো রাজনৈতিক শক্তিতে ব্যবহার করে নিজেদের পেশাকে হেয় প্রতিপন্ন করার কুৎসিত প্রচেষ্টার কথাও প্রকাশ পাচ্ছে। এটা শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে কোনোভাবেই যায়না। 

লেখক : ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা ঢাবিতে ভর্তি আবেদনের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha ঢাবিতে ভর্তি আবেদনের সময় বৃদ্ধি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ ই-রিকুইজিশনের সংশোধন অপশন চালু - dainik shiksha ই-রিকুইজিশনের সংশোধন অপশন চালু এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উচ্চতর স্কেল পাচ্ছেন ২ হাজার ৯২৩ শিক্ষক - dainik shiksha উচ্চতর স্কেল পাচ্ছেন ২ হাজার ৯২৩ শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039620399475098