চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের স্বর্পরাজপুর গ্রামের মহিদুল ইসলাম তোতার ছেলে ও স্বর্পরাজপুর দাখিল মাদরাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র মারুফ হোসেন (১৩) হত্যা মামলায় ৪ আসামিকে ফাঁসি ও ১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দিয়েছেন।
রায়ের পর নিহত মারুফ হোসেনের মা আবিরুন্নেছো বলেন, সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সৎভাতিজা আমার ছোট ছেলে মারুফকে (১৩) দোকানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অপহরন করে নিয়ে যায়। সে নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ দিন পর জগদীশপুর তুলা বীজ বর্ধন খামারের পাশের একটি বাগানে তার শরীরের টুকরা টুকরা অংশ পাই। এ ঘটনায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরো অজ্ঞাত আসামিদের নামে চৌগাছা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করি। এক পর্যায়ে মামলাটি যশোর থেকে খুলনা দ্রুত ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হয়। খুলনা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়। স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। তাই ছেলে হত্যার বিচার পেতে হাইকোর্টে আপিল করেছিলাম। হাইকোর্ট ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ে সন্তুষ্ট, কার্যকর হলে আমি খুশি।
আদালতে আপিলকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম এ মুনতাকিম ও চৌধুরী সামসুল আরেফিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
আপিলকারীর আইনজীবী জানান, যে ৪ আসামিকে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন তারা হলেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের স্বর্পরাজপুর গ্রামের মৃত আজেহার আলী মন্ডলের ছেলে মো. সুলাইমান মণ্ডল, গওহর আলীর ছেলে আবুল বাশার, নুর ইসলাম ওরফে লালুর ছেলে মো. বাবু ও মিজানুর রহমানের ছেলে আজাহারুল ইসলাম ওরফে বুড়ো। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে একই গ্রামের মৃত আজেহার মন্ডলের ছেলে মো. হজরত আলি মণ্ডলকে।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মে খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ জনসহ ১০ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছিলেন। খালাস পাওয়া অপর পাঁচজন হলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হযরত আলী মন্ডলের ছেলে মো. বিল্লাল হোসেন মন্ডল ও মো. টুটুল মণ্ডল, আবুল কাশেম কালুর ছেলে শফিকুল ইসলাম ও ইশার আলীর ছেলে মো. ইকরামুল হোসেন ও ঝিনাইদাহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শমসের মন্ডলের ছেলে খলিল মন্ডল। তাদের খালাসের আদেশ হাইকোর্টে বহাল রাখা হয়েছে বলে এই আইনজীবী জানান।
রায়ের পর আইনজীবী চৌধুরী সামসুল আরেফিন বলেন, মারুফকে কারা অপহরণ করে হত্যা করেন, তা আসামি আজাহারুল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসেছে। এই জবানবন্দি সাক্ষী দিয়ে সমর্থিত। অথচ বিচারিক আদালত তা বিবেচনায় না নিয়ে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, চাক্ষুষ সাক্ষীর সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও বয়স বিবেচনায় হযরত আলী মন্ডলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ আগস্ট সকালে চৌগাছা উপজেলার স্বর্পরাজপুর গ্রামের মহিদুল ইসলাম তোতার ছেলে মো. মারুফ হোসেন বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। এরপর খোঁজ করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে ১৬ আগস্ট চৌগাছা থানার জগদীশপুর তুলা বীজ বর্ধন খামারের পাশে কান্দি মৌজায় অবস্থিত এক ব্যক্তির বাগানে মাথাবিহীন হাত-পা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় পরদিন মারুফের মা হজরত আলিসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চৌগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।