ছাত্রনেতা শহীদ আসাদের জন্মদিন আজ

আমাদের বার্তা ডেস্ক |

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এর ছাত্রনেতা শহীদ আসাদ এর জন্মদিন আজ। তার পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। আসাদ নামেই তিনি পরিচিত। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামের হাতিরদিয়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আসাদ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলহাজ মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের বিএবিটি হাতিরদিয়া সাদত আলী হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হেডমাস্টার ছিলেন। আসাদের মায়ের নাম মতি জাহান খাদিজা খাতুন।

তিনি নারায়নগঞ্জ আইইটি (ইসলামি এডুকেশন ট্রাস্ট) গার্লস প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। আসাদের জন্মের পর তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক শিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ও এমসি কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে বিএ এবং ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ওই বৎসরেই আসাদ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এবং কৃষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নির্দেশনায় কৃষক সমিতিকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুরা এবং নরসিংদী এলাকায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন।

আসাদ ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ)-এর ঢাকা হল শাখার সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান সংগঠক। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার সমাবেশ থেকে ১১ দফার বাস্তবায়ন এবং ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ ও ইপিআর বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা লঙ্ঘনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ২০ জানুয়ারি গোটা পূর্ব পাকিস্তানের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছিলো। এ ধর্মঘট মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তথাপি বিভিন্ন কলেজের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সমবেত হয় এবং বেলা ১২টার দিকে বটতলায় এক সংক্ষিপ্ত সভা শেষে প্রায় দশহাজার ছাত্রের একটি বিশাল মিছিল ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজপথে পা বাড়ায়। মিছিলটি চাঁনখা’র পুলের নিকটে তখনকার পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে এর ওপর পুলিশ হামলা চালায়।

প্রায় ঘন্টাখানেক সংঘর্ষ চলার পর আসাদসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা মিছিলটিকে ঢাকা হলের পাশ দিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা খুব কাছ থেকে রিভলবারের গুলি ছুঁড়ে আসাদকে হত্যা করে। তার মৃত্যু ঊনসত্তরের ছাত্র-গণআন্দোলনের গোটা অবয়বকেই পাল্টে দেয় এবং তা আইয়ুব খানের শাসন ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। 

হাজার হাজার শিক্ষার্থী মেডিক্যাল কলেজের দিকে ছুটে আসে। বেলা তিনটায় কোনোরকম প্রস্ত্ততি ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের হয় একটি বিরাট শোক মিছিল। মেয়েদের নেতৃত্বে এ মিছিল অগ্রসর হতে থাকলে সাধারণ জনগণও এতে যোগ দেয়। আসাদের মুত্যুর প্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে বের হওয়া প্রায় দুমাইল দীর্ঘ মিছিলটি শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।

আসাদের মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি গোটা পূর্ব পাকিস্তানে তিনদিনব্যাপী শোক ঘোষণা করে। এ ছাড়া কমিটি ঢাকা শহরে হরতাল এবং পরবর্তী চার দিন প্রতিবাদ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। ২৪ তারিখে হরতালে গুলি চললে ঢাকার পরিস্থিতি গভর্নর মোনেম খানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সরকারের দমন নীতি জনতাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি এবং অবশেষে প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের পতন ঘটে।

বস্ত্তত, আসাদের মৃত্যুতে ঊনসত্তরের গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। অনেক জায়গায় জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইয়ুবের নামফলক নামিয়ে আসাদের নাম উৎকীর্ণ করে। এভাবে ‘আইয়ুব গেট’ হয়ে যায় ‘আসাদ গেট’, ‘আইয়ুব এভিনিউ’ নামান্তরিত হয়ে হয় ‘আসাদ এভিনিউ’। তখন থেকে আসাদের নাম হয়ে ওঠে নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032989978790283