দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় কক্ষে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রথম বর্ষের বিভিন্ন বিভাগের ১২ শিক্ষার্থীকে পুরো রাত কক্ষের বাইরেই কাটাতে হয়েছে। অভিযুক্তরা সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান রুদ্র, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ আলী এবং সানজিদুল ইসলাম শিহাব। তারা সবাই ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও হল ছাত্রলীগের কর্মী। অভিযুক্তরা সবাই হল ছাত্রলীগের ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ খান শৈশবের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার হয়ে কক্ষটি নিয়ন্ত্রণ করেন অভিযুক্তরা। শৈশব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের রাজনীতি করেন বলে জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে হলের ৫২৬ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সূর্য সেন হলের ৫২৬ নম্বর কক্ষের ১২ শিক্ষার্থীর তিনজন ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেন। বাকিরা রিডিং রুমে পড়ছিলেন। তাদের পাঁচজনের পরীক্ষা ছিল। কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় ওই রুমের সব শিক্ষার্থীকে রাত ১১টার দিকে বের করে দেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে রুমে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সারা রাত হলের বাইরে কাটাতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন পরীক্ষা থাকা শিক্ষার্থীরা। তারা হলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তামিম বিন ইউসুফ অপূর্ব, মোহাম্মদ হালিম, মুশফিকুর রহমান, উর্দু বিভাগের তানভীর হাসান এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মারুফ হাসান।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘প্রতিদিনই একটা না একটা প্রোগ্রাম থাকে। জরুরি প্রয়োজনে কোনো প্রোগ্রামে অনুপস্থিত থাকলে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে গালাগালসহ মানসিক নির্যাতন করা হয়। মঙ্গলবার রাতে এর অংশ হিসেবেই রুমে তালা দিয়ে আমাদের বের করে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পরীক্ষা থাকায় আমরা কয়েকজন ছাত্রলীগের বাধ্যতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারিনি। রাত ১১টার দিকে রুদ্র, আলী ও শিহাব ভাই আমাদের রুমে তালা মেরে দেন। কয়েকজন ঘুমাচ্ছিল, তাদের ঘুম থেকে তুলে বের করে দেওয়া হয়। আমরা সবাই খুব অমানবিক রাত কাটিয়েছি। এখন পর্যন্ত তালা খোলা হয়নি। আমরা খুব বিপদে আছি।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এ সপ্তাহে আমাদের অনেকেরই পরীক্ষা চলছে এবং আমাদের প্রয়োজনীয় বইগুলো রুমের ভেতর থাকায় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছি না। কখন রুম খুলবে তারও নিশ্চয়তা নেই। আমাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী জুবায়ের হাসান রুদ্র বলেন, ‘তাদের বের করে দিয়েছি বিষয়টা এমন নয়। আমরা তাদের অন্য রুমে শিফট করার জন্য তালা দিয়েছি। তারা ১২-১৪ জনের রুমে মাত্র দুজন থাকে। তাদের অন্য রুমে দিয়ে আমরা সিনিয়ররা ওই রুমে থাকার জন্য বের করেছি। তারা হল থেকে বের হয়নি, অন্য রুমে ছিল।’
শিফট করার দায়িত্ব আপনাদের দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো প্রশাসনের কাজ নয়, ছাত্রলীগের জুনিয়র-সিনিয়রদের মধ্যে এটি হয়ে থাকে।’
তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত করেছেন তাদের অন্য রুমে শিফট করা হয়নি বরং তালা মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ খান শৈশব বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনার কথা আমি শুনিনি। এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এরপরও বিষয়টার খোঁজ নিচ্ছি। এমন হয়ে থাকলে খুব খারাপ হয়েছে।’
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘সত্যিই ঘটে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’