ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতির পরিচয় প্রকাশের পর এবার প্রকাশ্যে এসেছে সেক্রেটারির পরিচয়। তার নাম এস এম ফরহাদ। তার পরিচয় প্রকাশ্যে আসার পর এ নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, তিনি ছাত্রলীগেরও পদধারী ছিলেন বলে পক্ষে-বিপক্ষে কথা রয়েছে। নেতৃত্বে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরও।
তবে ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচি বা কার্যক্রমের সঙ্গে নিজের কোনোরকম সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেছেন ঢাবি শিবির সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচি ও কার্যক্রমের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্রলীগের কোনো পদ-পদবির জন্য আমি কখনো কাউকে সিভি দিইনি।’
গতকাল রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাবি শাখা ছাত্রশিবির সেক্রেটারির নাম প্রকাশ হলে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে।
জানা যায়, এস এম ফরহাদ ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী। তিনি থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলে। ঢাবি শাখা শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েমও বিষয়টির সত্যতা জানিয়েছেন।
সাদিক কায়েম বলেন, ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পুরো কমিটির তালিকা খুব দ্রুতই প্রকাশ করা হবে। গত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিকস (গোপন রাজনীতি) করতে বাধ্য করেছে।
পরিচয় প্রকাশ্যে আসার পর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রকাশিত এক কমিটিতে নাম রয়েছে এস এম ফরহাদের। তিনি ২০২২ সালের নভেম্বরে ঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়ে ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা রয়েছে।
ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাবি শিবির সেক্রেটারি বলেন, ‘ডিপার্টমেন্টের কমিটিতে কাকে রাখা হবে সেটা সংশ্লিষ্ট ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত। সেখানে আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে, যেখানে আমি ডিপার্টমেন্ট ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচির সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। এ বিষয়টিকে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের স্পিরিট ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র মনে করি।’
কবি জসীমউদ্দীন হল ডিবেটিং ক্লাবের একটি ইফতার অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কারিগরি শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এস এম রাকিব সিরাজীর সঙ্গে ফরহাদের একটি ছবি এবং তানভীর হাসানকে ফরহাদের ফুল দেওয়ার আরেকটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
এ বিষয়ে এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমি হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ও ডিপার্টমেন্ট ডিবেটিং ক্লাবের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় ডিবেটের বিভিন্ন আয়োজনে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিত থাকার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, যার সবগুলোই ছিল ডিবেট ক্লাব সংশ্লিষ্ট আয়োজন। কোনো রাজনৈতিক আয়োজন নয়।’
এর আগে ফরহাদের নামের সঙ্গে মিল থাকলে এস এম ফরহাদ নামে ছাত্রলীগের অন্য কমিটির অন্যজনের নাম মিলিয়ে তার (ঢাবি শিবির সেক্রেটারির) ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
তবে সেই (ছাত্রলীগের) কমিটির এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমাকে অনেকেই ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন (মেনশন দিচ্ছেন)। যেহেতু আমার নামের সঙ্গে আমার ছোট ভাই এস এম ফরহাদের নামের মিল আছে তাই অনেকেই কনফিউশনে আছেন। সেজন্য আমার অবস্থান ক্লিয়ার করছি। আমার নাম এস এম ফরহাদ। সেশন ২০১৬-১৭। বিভাগ ফারসি ভাষা ও সাহিত্য ঢাবি। বাড়ি সাতক্ষীরা।’
‘ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারি আমার হলের ছোট ভাই। অমায়িক ছেলে। হল ডিবেটিং ক্লাবের খুবই কাছের জুনিয়র। ছোট ভাইয়ের জন্য অনিঃশেষ শুভকামনা’- বলেন এস এম ফরহাদ।
গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেওয়ার পর ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েমের পরিচয় প্রকাশ্যে আসে। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। সাদিক ও ফরহাদ দুজনই চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।