ছাত্রাবাসে ধর্ষণ : অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে প্রধান আসামি সাইফুর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অন্য তিনজনকে দুষছে প্রধান আসামি সাইফুর রহমান। আদালতে সে দাবি করে, রাজন, আইনুদ্দিন ও তারেক 'ঘটনা' ঘটিয়েছে। গতকাল সোমবার রিমান্ড শুনানির সময় আসামির উকিল না থাকায় আদালত বক্তব্য জানতে চাইলে সাইফুর এ কথা বলে। এ সময় সে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। আরেক আসামি অর্জুন লস্করও দাবি করে, তার দোষ নেই। মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, শুনানি শেষে মহানগর হাকিম দু'জনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য বলেন, সাইফুর ও অর্জুন লস্করকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক শুনানি শেষে দু'জনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই আদালত বিকেলে আরেক আসামি রবিউল ইসলামেরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। প্রধান আসামি সাইফুর আদালতে যে তিনজনের নাম বলেছে, তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত তারেক এখনও পলাতক। সে সুনামগঞ্জ সদরের উমেদ নগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে। তবে রাজন মিয়া ও আইনুদ্দিনকে রোববার রাতে র‌্যাবের একটি দল ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে। গতকাল তাদের শাহপরান থানায় হস্তান্তর করা হয়। এদিন রাত পৌনে ১২টার দিকে আরেক আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুমকে জৈন্তাপুর উপজেলার হারপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও কানাইঘাট থানা পুলিশের যৌথ দল। মাসুমের বাড়ি কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামে। ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজন গ্রেফতার হলো। সাইফুর, অর্জুন, রবিউল, মাসুম ছাড়াও রোববার রাতে মাহবুবুর রহমান রনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহারের বাইরে মো. আইনুদ্দিন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এমসি কলেজের ফটকের সামনে থেকে ছাত্রাবাসে এক তরুণী ও তার স্বামীকে ধরে নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন। এরপর স্বামীকে আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিনজনকে আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা করেন তরুণীর স্বামী। যে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবেই পরিচিত। তারা হলো সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক আহমদ, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুম।

গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে পুলিশ প্রথমে সাইফুর ও অর্জুনকে আদালতে নিয়ে আসে। এ সময় তাদের মাথায় হেলমেট ও পুলিশের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো ছিল। সকাল ১১টা থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে তাদের মহানগর হাকিম (দ্বিতীয়) আদালতে হাজির করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি খোকন কুমার দত্ত ছাড়াও আরও কয়েকজন শুনানিতে অংশ নেন। আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। এপিপি খোকন কুমার দত্ত বলেন, আদালত আসামিদের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা দাবি করে, তারা অপরাধ করেনি। রাজন, আইনুদ্দিন ও তারেক ঘটনা ঘটিয়েছে।

এদিকে সাইফুর ও অর্জুনকে নিয়ে আসার সময় আদালত প্রাঙ্গণে জনতার ভিড় লেগে যায়। শতাধিক মানুষ তাদের দেখে 'ফাঁসি চাই', ফাঁসি চাই' স্লোগান দেয়। অনেককে আসামিদের উদ্দেশে গালি দিতেও শোনা যায়। কয়েকজন তাদের মারার জন্য উদ্যত হলে পুলিশ তাদের নিবৃত করে।

মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মামলার আরেক আসামি রবিউলকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে পাঁচ দিনের মঞ্জুর করেন আদালত।

হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. সেলিম সমকালকে বলেন, নবীগঞ্জের এনায়েতগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল রবিউল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রবিউল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্ক অবস্থানে থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়।

সাক্ষ্য দেওয়ার আহ্বান

ছাত্রাবাসের সার্বিক ঘটনা খতিয়ে দেখতে গঠিত এমসি কলেজের তদন্ত কমিটি সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে সাক্ষীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

গতকাল কলেজের নোটিশ বোর্ডে এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি লাগানো হয়। এতে কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ ও তদন্ত কমিটির প্রধান কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর সই রয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, '২৫ সেপ্টেম্বর কলেজের ছাত্রাবাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষদর্শী, তাদের মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় কলেজের শিক্ষাবিদ সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিতে অনুরোধ করা গেল।'

গত শনিবার কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তাদের সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ কমিটিতে ছাত্রাবাসের দুই তত্ত্বাবধায়ককে রাখায় ব্যাপক সমালোচনা হয়।

ছাত্রদলের অভিযোগ

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদল। গতকাল সিলেট প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।

মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী আহসান বলেন, 'শনিবার আমরা একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছিলাম। সেই মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়ে ৯-১০ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করেছে।' তিনি বলেন, গতকাল সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রদল কেন্দ্রঘোষিত মানববন্ধন পালন করতে গেলে পুলিশ বাধা দিয়ে বন্ধ করে দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, মহানগর সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ, জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন নাদিম প্রমুখ।

আরও পড়ুন :

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ : আরেক আসামি অর্জুন গ্রেফতার

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ : প্রধান অভিযুক্ত সাইফুর গ্রেফতার

এমসি কলেজে গণধর্ষণের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন, ২ গার্ড সাসপেন্ড

ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ : প্রধান আসামি সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা

ছাত্রাবাসে ধর্ষণ : অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে সাধারণ শিক্ষার্থীরা

ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ : আরেক আসামি মাসুম গ্রেফতার


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027880668640137