ছাত্রী হোস্টেলে থাকেন শিক্ষক-কর্মচারী, অন্যখানে শিক্ষার্থীরা

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাজশাহী |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাজশাহী : রাজশাহী সরকারি সার্ভে ইনস্টিটিউটে ছাত্রীদের জন্য হোস্টেলে ডেরা পেতেছেন দুজন শিক্ষক আর একজন কর্মচারী। দুই বছর ধরে তাদের কারণে সেখানে থাকার সুযোগের অভাবে বাইরে মেসে-ভাড়া বাসায় থাকছেন শিক্ষার্থীরা। দূরে থেকেই ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে হয় তাদের। 

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহীর আমচত্বর-বেলপুকুর মহাসড়কের পাশে নগরীর উপকণ্ঠ কচুয়াতৈল এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাস। এটি পড়েছে পবা উপজেলায়।

প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগে এর ক্যাম্পাস ছিল শহরের প্রাণকেন্দ্র রাজারহাতা-সোনাদিঘি এলাকায়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ করে ক্যাম্পাসটি সেখানে স্থানান্তর হয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে। আগে এটি পরিচালনা করত জেলা পরিষদ। 

আগে এর নাম ছিল ‘ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট, রাজশাহী’। গত ২৩ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারীকরণের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন করে এর নাম রাখা হয়েছে ‘রাজশাহী সরকারি সার্ভে ইনস্টিটিউট’। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে যখন নতুন ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে, তখন একটি চারতলা একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন, ছেলেদের একটি চারতলা হোস্টেল ও মেয়েদের একটি একতলা হোস্টেল ছিল। এখন সেখানে আরেকটি চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। শুরু থেকেই ছেলেরা হোস্টেল সুবিধা পেয়ে আসছে। মাত্র ১ টাকা ভাড়ায় তাঁরা সেখানে থাকেন। কিন্তু বঞ্চিত মেয়েরা। 

মেয়েদের হোস্টেলটিতে তিনটি কক্ষ, একটি ডাইনিং, একটি টিভি রুম ও একটি স্টোর রুম আছে। এখানে প্রায় ৩০ জন ছাত্রীকে রাখা যাবে। তবে এক দিনের জন্যও মেয়েদের হোস্টেলে তোলা হয়নি। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে সার্ভে ইনস্টিটিউটের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন হারুন-অর-রশিদ। তিনি এসে মেয়েদের হোস্টেলের একটি কক্ষে ওঠেন। তাঁকে দেখে হোস্টেলে ওঠেন ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর সাদমান সাকিব ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেজাউল করিম। দুই বছর ধরে তাঁরাই বসবাস করছেন সেখানে। তবে তাঁদের পরিবারের কেউ সেখানে থাকেন না বলে জানা গেছে। 

গতকাল রোববার সকালে সার্ভে ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, মূল একাডেমিক ভবনের পেছনেই মেয়েদের হোস্টেলটি। সামনে ফুলের গাছ লাগানো। সবজিরও চাষ করা হয়েছে। সেখানেই পাওয়া গেল পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেজাউল করিমকে। তিনি বলেন, ‘ছাত্রীদের এখানে রাখা হয় না। আমরা তিনজন থাকি। থাকার জন্য কাউকে কোনো ভাড়া দেওয়া লাগে না। তবে আলাদা মিটার আছে। আমরা তিনজনে শুধু বিদ্যুৎ বিলটা দিয়ে থাকি।’ 

বিভাগীয় প্রধান হারুন-অর-রশিদ ক্যাম্পাসে ছিলেন না। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হোস্টেলটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। আমরা পরিষ্কার করে উঠেছি। এই প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় জনবল নেই। আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকি। ক্যাম্পাসটা দেখে রাখি।’ 

ক্যাম্পাসে কথা হয় কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে। তারা জানান, হোস্টেলে আবাসন সুবিধা না পাওয়ায় তাঁদের বাইরে মেসে কিংবা ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। অনেকটা নির্জন এই এলাকায় বাসা কিংবা মেস ভাড়া পাওয়া যায় না। কয়েক কিলোমিটার দূরে শহরের কাছাকাছি এলাকায় তাঁদের থাকতে হয়। সেখানে থেকে যাতায়াত করেন। মেস ভাড়া ও যাতায়াতে বাড়তি খরচ হয়। কর্তৃপক্ষ তাঁদের বলেছে, হোস্টেল থাকার জন্য প্রস্তুত হয়নি। হোস্টেলে অন্যদের বসবাসের বিষয়ে জানেন কি না এমন প্রশ্নে ওই ছাত্রীরা কোনো মন্তব্য না করে হাসেন। 

ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার সুলতানা পারভীন জানান, এখানে সার্ভেয়ার নামে একটিই বিভাগ। এসএসসি পাসের পর শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয়। আসন থাকে ১০০টি। চার বছরে আট পর্বে তাদের উত্তীর্ণ হতে হয়। আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে এইচএসসি পাসের পরও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় তৃতীয় পর্বে। এই শিক্ষার্থীরা তখন প্রথম দুই পর্ব পায় না। এখন প্রতিষ্ঠানটিতে ৩২১ জন ছেলে ও ৬৯ জন মেয়ে পড়াশোনা করছে। চারতলা ছেলেদের হোস্টেলে আসনসংখ্যা ১০০টি। মেয়েদের একতলা হোস্টেলে আসন কত তা তিনি জানেন না। 

জানতে চাইলে রাজশাহী সরকারি সার্ভে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আমিরুল ইসলাম বলেন, মূল ক্যাম্পাসের কিছু অংশে সীমানাপ্রাচীর নেই। আবার মেয়েদের হোস্টেল ক্যাম্পাসের ভেতরে হলেও এর জন্য আলাদা প্রাচীর দরকার, সেটাও নেই। সে কারণে মেয়েদের হোস্টেলে রাখা যায় না। মেয়েদের জন্য আলাদা হোস্টেল নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। তারা ওখানে থাকবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ - dainik shiksha বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026459693908691