কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীকে শিক্ষকের কুপ্রস্তাব, রাজি না হওয়ায় হেনস্তা

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ময়মনসিংহ |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ময়মনসিংহ : জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সাজন সাহা নামের সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।

সাজন সাহা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। অঙ্ক বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টাগ্রামে মাঝরাতে ছাত্রীদের চা পানের নিমন্ত্রণ করা, শাড়ি পরে দেখা করতে বলা, ছবি ও ভিডিও চাওয়া, অশ্লীল ভিডিও লিংক শেয়ার করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

 

এসব অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গ্রুপে একটি দীর্ঘ পোস্ট দেন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ওই ছাত্রী। রোববার (৩ মার্চ) থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের অন্তরঙ্গ কথোপকথনের স্ক্রিনশট। এ ঘটনায় সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ভর্তির পর থেকেই সাজন সাহা স্যার আমাকে নানান ধরনের মেসেজ দিতেন। রাত বিরাতে চা পানের আমন্ত্রণ, বাসায় কেউ না থাকলে আসতে বলা, একাকী অফিসে ডাকা এবং পাশাপাশি অশ্লীল ছবি ও ভিডিও লিঙ্ক দিয়ে বিরক্ত করতেন। তার কোর্সে ভালো নম্বর পাইয়ে দেয়ার অফারও দিয়েছেন বহুবার। তার কথায় রাজি না হলে আমার ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট আটকে রাখাসহ নানাভাবে হয়রানি করেন শিক্ষক সাজন সাহা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাজন সাহা স্যারের চা পানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় আমার সব বিপদ নেমে আসে। ক্লাসে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় বসতে জরিমানা গুনতে হয়েছে আমাকে। পরীক্ষার নম্বর কমে গেছে, থিসিস পেপার নিয়ে বারবার হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এছাড়া এমন আর অনেক ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয় আমাকে। সবশেষ উপায় না পেয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছি।’

নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছয়জন ছাত্রী বলেন, ‘আমাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছিলেন সাজন সাহা স্যার। শিক্ষক মনে করে তাকে একসেপ্ট করি। এরপর থেকেই শুরু হয় যন্ত্রণা। নিয়মিত বিরতিতেই আমাদের সঙ্গে চা পান করতে চাইতেন, একাকী তার ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকতেন, বিভিন্নভাবে পোজ দিয়ে ছবি আর ভিডিও পাঠাতে বলতেন। আমরা তার জ্বালায় অতিষ্ঠ। এমন শিক্ষকের শাস্তি না হলে আমরা স্বস্তি পাবো না।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুনিয়র সহকর্মীর এমন অনৈতিক কাজে পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছেন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র। তাকে এ বিষয়ে জানালে বিষয়টি সমাধানে নানা শর্ত জুড়ে দেন।

এদিকে এ ঘটনার বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ছয় দফা দাবিসহ একটি লিখিত অভিযোগ উপাচার্যের কাছে জমা দেন।

দাবিগুলো হলো অভিযুক্ত শিক্ষকে চাকরিচ্যুতি, অপরাধের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অনতিবিলম্বে পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ভবিষ্যতে এ ঘটনার কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ার নিশ্চয়তা এবং ৪৮ ঘণ্টার দাবি মধ্যে বাস্তবায়ন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার নম্বরে একাধিকবার কল করলে তা বন্ধ দেখায়। এজন্য তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র বলেন, প্রশ্রয় দেয়ার যে অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা-বানোয়াট। আমি ওই বিভাগের প্রধান। শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবার দায়িত্ব আমার ওপরে। আমি আমার দায়িত্বে পালনে সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করি। তবে, কোনো শিক্ষকের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় তো আমরা নেবো না।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমি ২০১৮-১৯ ব্যাচে ভর্তি হই। এরপর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষক সাজন সাহা আমার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে আসছেন। এখন অপারগ হয়ে আমি বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছি। আমার দাবি একটাই, ওই শিক্ষকের বহিষ্কার।’

এ বিষয়ে প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। মঙ্গলবার (আজ) ওই শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দেবে বলে জেনেছি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘এটি খুবই বিব্রতকর ব্যাপার। আমার কাছে শিক্ষার্থীরা এসেছিল। ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! জাল সনদে চাকরি, লাইব্রেরিয়ানকে তলব - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি, লাইব্রেরিয়ানকে তলব শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ - dainik shiksha শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ - dainik shiksha প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052661895751953