ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে

পাবনা প্রতিনিধি |

পাবনার সাঁথিয়ার দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির পক্ষ থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষকদের শ্রেণি পাঠদান থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির দুই ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক অনৈতিক প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে অভিযোগকারী দুই ছাত্রীর বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ ঘটনায় ১৯ মে দুই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। এরপর ২১ মে একই দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এস এম জামাল আহমেদের কার্যালয়ে গেলে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও গতকাল রোববার দুই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এ ছাড়া তিনি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে দেন।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সূত্রে জানা যায়, ওই দুই শিক্ষক তাঁদের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেন। প্রাইভেট পড়তে না চাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণসহ বিভিন্ন সময় হুমকিও দেওয়া হয় বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে।

আজ সোমবার সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দশম শ্রেণির অন্তত ২০ জন ছাত্রীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। ছাত্রীরা বলে, ওই দুই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর দেওয়া হবে না এবং বোর্ড পরীক্ষাতেও ফলাফল খারাপ করে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখানো হতো। এ ছাড়া কয়েকজনকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও একাধিক ছাত্রী অভিযোগ করে।

অভিযোগ তোলা ওই দুই ছাত্রী বলে, মাস তিনেক আগে এক শিক্ষক তাকে পড়া শেষ করে অপেক্ষা করতে বলেন। পরে সব শিক্ষার্থীরা চলে গেলে ওই শিক্ষক তাকে একা বাড়িতে আসার জন্য প্রস্তাব দেন। এ সময় ওই শিক্ষক বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে ওই শিক্ষার্থী দাবি করে।

অভিযোগকারী আরেক ছাত্রী অভিযুক্ত আরেক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে। সে বলে, ওই শিক্ষকও তাকে বাড়িতে একা আসার জন্য প্রস্তাব দেন এবং বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করেন।

ওই দুই ছাত্রী জানায়, ঘটনা দুটি প্রায় তিন মাস আগে ঘটেছে। ঘটনার পরপরই দুই ছাত্রী বিষয়টি তাদের পরিবারকে জানালেও মানসম্মানের ভয়ে তাদের পরিবার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ সময় দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ তোলে শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই দুই ছাত্রীও অনৈতিক প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়ে মুখ খোলে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের সঙ্গে ওই দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্ব আছে। গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের ক্লাস সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকদের নিতে না দিয়ে ওই দুই শিক্ষক নিজেরাই নিতেন। এতে বাকি শিক্ষকেরা প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এর ফলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ওই শিক্ষকেরা সরাসরি উৎসাহ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে একজন বলেন, বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষকসংকটের কারণেই তিনি ও আরেক শিক্ষক ক্লাস নিতেন। শিক্ষার্থীদের অনুরোধেই তাঁরা প্রাইভেট পড়ান। তাঁদের দুজনকে ফাঁসানোর জন্য বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর বক্তব্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়া হয়েছে।

অভিযুক্ত আরেক শিক্ষক বলেন, ‘অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাদের বিদ্যালয়েরই এক শিক্ষক ছাত্রীকে শিখিয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিও ধারণ করে প্রচারের ব্যবস্থা করেছেন।’

ইউএনও জামাল আহমেদ বলেন, দুই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে কেউ উসকে দিচ্ছে কি না, সে ব্যাপারটিও দেখা হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026230812072754