ছাত্রীদের আপত্তিকর ছবি-ভিডিয়ো পাঠানোর অভিযোগ রাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাবি |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, ক্লাস-পরীক্ষা ও খাতা দেখায় অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের ফেল করানোর ভয় দেখানোসহ মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গভীর রাতে নারী শিক্ষার্থীদের ভিডিয়ো কল ও মেসেজ দিয়ে বিরক্ত করা এবং অশালীন ছবি ও ভিডিয়ো পাঠানোর কিছু ডকুমেন্ট এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে এই শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।  

অভিযোগপত্রে তারা উল্লেখ করেছেন, তিনি বিবাহিত ছাত্রীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের আলাপ, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের বিস্তারিত জানতে চেয়ে অশ্লীল বিভিন্ন বিষয় টেনে নিয়ে আসতেন। কোনো বিষয় নিয়ে তাকে রিকোয়েস্ট করতে গেলে তিনি বলতেন অশ্লীল কথা। অ্যাটেনডেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি নারী শিক্ষার্থীদের ডেস্কের ভেতরে গিয়ে তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সাইন দিতে বাধ্য করতেন। নারী শিক্ষার্থীদের আন্ডার গার্মেন্টস নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন। এছাড়া পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব জানান বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।

তারা আরও অভিযোগ করেছেন, কারুশিল্প ডিসিপ্লিনে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে প্রত্যেকটা ব্যাচের সকল ব্যবহারিক ক্লাস ও মার্কিংয়ের দায়িত্ব একাই পালন করেন তিনি। ফলে বিভাগে তিনি একনায়কতন্ত্র কায়েম করে শিক্ষার্থীদের ফেল করানোর হুমকি দিয়ে থাকেন। তিনি ক্লাসের সবার সামনে নারী শিক্ষার্থীদের গায়ে আপত্তিকর স্থানে হাত দেন এবং অপ্রয়োজনে রাত বিরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিয়ো কল ও যৌন ইঙ্গিতমূলক ভাষা ব্যবহার করে মেসেজ দেন। এছাড়া শারীরিক গঠন নিয়ে বিভিন্ন অশালীন, আপত্তিকর মন্তব্য করে থাকেন এবং মেয়েদের তার কোলে বসার প্রস্তাবও দেন। বলতেন, 'জামার ভেতরে কী পরেছো, সব তো দেখাই যাচ্ছে।'

ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো মেসেজ ও ভিডিয়ো কল দেয়ার ডকুমেন্টস থেকে বেরিয়ে আসে ড. মনিরের আসল চেহারা। সেখানে দেখা যায়, গত ২০ জানুয়ারি তিনি এক নারী শিক্ষার্থীকে মেসেঞ্জারে একটি অশ্লীল ভিডিয়ো পাঠিয়ে লিখেছেন, 'এক্সট্রা ক্লাস চলিতাছে, বালা না?' ২০২০ সালের ৯ জুলাইয়ে আরেক শিক্ষার্থীকে লিখেছিলেন, 'রাত কিন্তু ৩টা ৫৪ বাজে, আমি করি চৌকিদার, আপনি কই?' আরেক নারী শিক্ষার্থীকে লিখেছেন, 'ঘুম নেই, একদম ফেইল করাই দিমু'। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে রাতে আরেক নারী শিক্ষার্থীকে একটি বাজে ছবি পাঠিয়ে বলেন, 'এটা কি তুমি?'

রাত ২টা ৪৮ মিনিটে 'লুচ্চা মেয়েদের নাম' শিরোনামে একটা অশ্লীল ভিডিয়ো পাঠিয়ে ভিডিয়োতে থাকা নামের সাথে মিল আছে এমন এক নারী শিক্ষার্থীকে লিখেছেন, 'আমি বলি নাই, দুনিয়া বলিতেছে, আমি কী করুম?' আরেক শিক্ষার্থীকে একটি নীল জগতের ভিডিয়ো পাঠিয়ে লিখেছেন, 'সুন্দর না? অনেকদিন পর দেখলাম।' মেয়েটি কোনো সাড়া না দিলে তিনি আবার লিখেছেন, কিছুই কি বলবা না?' আরেকজনকে লিখেছেন, 'আমার লগে তুমি কইরা দাহাও, কী যেন ঘষে দিতে চাইছিলা।' 'ওই তোমার ফোনে ভিডিয়ো কল দিলে ধরো না কেন? একবারে ফেল করাই দিমু।', এভাবেই এক নারী শিক্ষার্থীকে হুমকি দেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার সাথে এক ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমি যখন প্রথম বর্ষে ভর্তি হই তখন তার টার্গেটের শিকার হই। তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাকে ফোন করে ব্যক্তিগত বিষয় হস্তক্ষেপ করতেন। তিনি আমার ইনার গার্মেন্টস নিয়ে প্রতিদিন কথা বলতেন। জ্বর দেখার নাম করে হাতে, কপালে, মুখে, গলায় হাত দিতেন। উরু দেখিয়ে ঈশারা ইঙ্গিতে সেখানে বসতে বলতেন। 

আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, তিনি প্রায় প্রায় মেয়েদের জামার ভেতরের পোশাক নিয়ে আজেবাজে কথা বলতেন। তিনি একদিন আমাকে বলেন, 'জামার ভেতরে কী পরেছ, সব তো দেখাই যাচ্ছে। কালার বলব, কালার?' এই বলে উনি হাহা করে হাসতে থাকেন। উনি ক্লাসে প্রায়ই ডাবল মিনিং কথাবার্তা বলতেন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ড. মনির উদ্দিনকে একাধিকবার কয়েকটা নাম্বার থেকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

জানতে চাইলে গ্রাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলা ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর আমার কাছে ড. মনির উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ অনেক বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দেয় এবং তার বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করে। বিভাগের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমি সেদিন বিকেলেই জরুরি অ্যাকাডেমিক কমিটির মিটিং কল করি। সেখানে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। মিটিংয়ে কমিটির সবার পরামর্শে তাকে বিভাগের সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবর রহমান বলেন, আমরা অভিযোগ পত্রটি গ্রহণ করেছি। হয়তো ভিসি স্যারও পত্রটি পেয়েছেন। তবে কয়েকদিন ধরে ভিসি স্যার এতোই ব্যস্ত যে, এ বিষয়ে কথা বলার সময় পাননি। স্যারের থেকে কোনো নির্দেশনাও আমি পাইনি। স্যার এখন বাইরে আছেন। আগামী সপ্তাহে আমরা এ বিষয়ে একটা আপডেট জানাবো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034940242767334