ছাত্রীদের নেকাব খুলতে বাধ্য করলেন শিক্ষিকা

দৈনিক শিক্ষাডটকম, বেরোবি |

ক্লাস চলাকালীন সময়ে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের নেকাব খুলতে বাধ্য করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক শিক্ষিকা। এসময় নেকাব না খুললে তাদের প্রেজেন্টেশন ও পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও হুমকি দেন তিনি। ওই শিক্ষিকার ভাষ্য, বিভাগের প্রেজেন্টেশন ও পরীক্ষায় ছাত্রীদের অবশ্যই মুখ খোলা রাখতে হবে। এ ঘটনায় এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছেন, ম্যাডামের এমন আচরণ দেশের সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একইসঙ্গে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনে বাধা প্রদান ও পোষাকে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। তাই আমি যেভাবে ধর্ম পালনে বাঁধা ও হয়রানির শিকার হয়েছি, আর কেউ যেন এমন হয়রানির শিকার না হন সেটাই আমি চাই।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের (১৫ তম ব্যাচের) ক্লাসে এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকার নাম কুন্তলা চৌধুরী। বর্তমানে তিনি ওই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।

রবিবার (১০ ডিসেম্বর) দেওয়া অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী বলেন, গত ৪ ডিসেম্বর তারিখে আমাদের বিভাগের শিক্ষিকা ও সহযোগী অধ্যাপক কুন্তলা চৌধুরী ম্যাডাম আমাদের শ্রেণিকক্ষে যারা নেকাব পরিহিতা ছিলেন তাদের সবাইকে নেকাব খুলে ক্লাস করতে বলেন। অনেকে ম্যাডামের কথা মতো ভয়ে নেকাব খুললেও আমি ভয় পেয়েও নেকাব খুলিনি। আমি বলেছিলাম যে, ম্যাডাম ক্লাস শুরুর আগে বাইরে কোথাও বা অফিস রুমে আপনি আমাদের আইডেন্টিফাই করতে পারেন।

তখন তিনি বলেছেন, বাইরে কোথায় আইডেন্টিফাই করবো? তোমার বাসায়? এরপরে আমি আর কিছু বলিনি। কিছুক্ষণ পড়ানোর পর ম্যাম যখন দেখলেন আমি নেকাব খুলছিই না। তখন তিনি বলেছিলেন তোমার যদি নেকাব খুলতে এতই সমস্যা হয় তাহলে মুখ ঢেকেই ক্লাস করতে পার। কিন্তু আমার প্রেজেন্টেশন ও পরীক্ষায় তোমাকে মুখ খুলতেই হবে। পরে তিনি ক্লাসের পরে উনার সাথে দেখা করতে বলেন।

অভিযোগপত্রে ওই নারী শিক্ষার্থী আরও বলেন, এরপরে ক্লাস শেষ করে আমি অফিসরুমে ম্যাডামের সাথে দেখা করি এবং তিনি একাই আমার মুখ দেখেন। এরপরে আমি ম্যাডামকে বলি যে, ম্যাডাম প্রেজেন্টেশন বা পরীক্ষায় মুখ না খুললে হয় না? তখন তিনি সরাসরি না করে দিয়েছিলেন। ম্যাডামের এমন নেতিবাচক আচরণ আমার মনে ভীতি সঞ্চার করেছে। আমি আশঙ্কা করছি, ভবিষ্যতে আমাদের ধর্মীয় বিধানপর্দা লঙ্ঘনে বাধ্য করা হবে। আমি স্বাধীনভাবে ধর্মীয় বিধান পালনে অনিরাপদবোধ করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেরোবি শিক্ষিকা কুন্তলা চৌধুরী বলেন, আমি তাকে নিষেধ করিনি। আমি বলেছি যে তোমার চেহারা না দেখে বুঝবো কিভাবে যে তুমি আমার শিক্ষার্থী। আমি বলেছি, তুমি যদি খুবই অস্বস্তিবোধ করো তাহলে ক্লাসের পর এসে আমাকে চেহারা দেখিয়ে যেও। কারণ অন্য শিক্ষার্থীরা এসেও ক্লাস করতে পারে।

“আমি তাকে নিষেধ করিনি এ বিষয়ে। কারণ আমি ধর্ম পালনে কাউকে নিষেধ করতে পারি না। আমাদের এত বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে অন্য বিভাগ থেকেও শিক্ষার্থীরা আসতে পারে। আমরা ক্লাসে অনেক কিছুই পড়াই সে বুঝতে না পেরে সেটার মিসইন্টারপ্রেট করলো। তা তো হতে পারে না। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু না হয় তাই আমি আইডেন্টিফিকেশনের জন্য শুধু চেহারাটা দেখতে চেয়েছি আর কিছুই নয়।”

অভিযোগকারী ছাত্রীর সঙ্গে রবিবার বিকেলে যোগাযোগ করা তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো সব নিশ্চিত না। আমি আগামীকাল (সোমবার) কথা বলতে পারবো। আমি এখন একটু বাইরে আছি, আপনার সাথে পরে কথা বলছি। পরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার আর কোনো বক্তব্যে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তার থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র উপদেষ্টা ছাত্র উপদেষ্টা সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। আমাদের একটু সময় লাগবে। এই মুহূর্তে আর কিছু বলা যাচ্ছে না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য - dainik shiksha ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত - dainik shiksha উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034241676330566