সিলেটের ওসমানীনগরে নিহত অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী দিপা রানী সিংহের কথিত প্রেমিক ইমনকে আটক করেছে পুলিশ। আরও কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাঈন উদ্দিন বলেন, দিপা হত্যার ঘটনায় ইমনসহ সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আটক ইমন বালাগঞ্জ উপজেলার মধ্যবাজারের প্রান্ত বস্ত্রালয়ের কর্মচারী।
ওসি বলেন, সুরতহালে নিহত দিপার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। পিঠের কিছু অংশ থেতলানো ছিল। এটি যে হত্যাকাণ্ড, তা পরিষ্কার। আশা করি, দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার তাজপুর বাজারে স্কুল রোডের ইউপি চেয়ারম্যান অরুনোদয় পাল ঝলকের নির্মাণাধীন একতলা ভবনের ছাদ থেকে দিপার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান, ক্রাইম সিনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিম মিয়া, ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান, ডিবির ওসি ইকতিয়ার উদ্দিন, ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাইন উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিআইডির একটি টিমও ঘটনাস্থলে গিয়েছিল।
নিহত দিপা কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার তলাগ্রামের পীযুষ চন্দ্র সিংহের মেয়ে ও তাজপুর মঙ্গলচন্ডী নিশিকান্ত সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী।
দিপা তার পরিবারের সঙ্গে দুই বছর ধরে স্কুল রোডের দুলিয়ারবন্দ চেয়ারম্যান ঝলকের মালিকানাধীণ বহুতল ভবনের চারতলায় থাকত।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতের খাবার খেয়ে বাবা পীযুষ চন্দ্র সিংহের সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমাতে যায় দিপা সিংহ। ভোর ৫টার দিকে তার বাবা ঘুম থেকে জেগে দেখেন মেয়ে পাশে নেই। ঘরের সদরদরজা ও কলাপসিবল গেট খোলা। এ ছাড়া তার মা ও বড় ভাইয়ের মোবাইল এবং ঘরের চাবি নির্দিষ্ট স্থানে নেই।
পরে পাশেই একতলা নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদে দিপার রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় প্যারাডাইস মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওসমানীনগর থানা পুলিশকে খবর দিলে সকাল ৯টার দিকে মরদেহ পুলিশ হেফাজতে নিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিপা সিংহ প্রায়দিনই স্কুল ফাঁকি দিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে কথিত প্রেমিক ইমনের সঙ্গে দেখা করত।
স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাসে বেশির ভাগ দিনই সে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল। চলতি মার্চ মাসে মাত্র এক দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিল।
দিপার মামি বিথিকা দে পুলিশকে জানান, বৃহস্পতিবার দিপা মারা যাওয়ার বিষয়টি জানার পর তাদের বাসায় যান তিনি। আগে জানতে পারেন ইমন নামে একটি ছেলের সঙ্গে দিপার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি জানান, একাধিকবার দিপা বালাগঞ্জে গিয়ে ইমনের সঙ্গে দেখা করেছে। এ ছাড়া বালাগঞ্জের আরেকটি ছেলেও নাকি দিপাকে পছন্দ করত। এ নিয়ে ইমন ও সেই ছেলের মধ্যে ঝগড়াও হয়েছে।
দিপার মা শিল্পী রানী সিংহ জানান, জানামতে তাদের কোনো শত্রু নেই। দিপা মারা যাবার পর জানতে পারেন ইমন নামে একটি ছেলে সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সোমবার জানতে পারেন দিপা স্কুলে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত। কেন এমন হচ্ছে, দিপার সঙ্গে কথা বলেও কিছু জানতে পারেননি। মেয়েকে কে বা কারা হত্যা করেছে, তা পরিষ্কার। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দাবি করেন তিনি।
ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি দ্রুত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারব।