চট্টগ্রামে ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের ভাষ্য, মাদকের প্রতিবাদ করায় তিনি খুন হয়েছেন। তবে পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, পূর্ববিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
মারা যাওয়া কলেজছাত্রের নাম আশিকুর রহমান (১৮)। আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে।
আশিকুর চট্টগ্রাম নগরের ওমর গণি এমইএস কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। নগরের চকবাজারের ক্রীড়া সংগঠন মা মণি ক্লাবের সদস্য ছিলেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, ৮ জানুয়ারি বিকেলে নগরের বাকলিয়া থানার দেওয়ান বাজার ভরা পুকুরপাড়সংলগ্ন কেডিএস গলির ভেতরে আশিকুরের ওপর অতর্কিত হামলা হয়। যুবলীগ নামধারী স্থানীয় মো. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে সাহাবু ওরফে কালা সাহাবু তাঁর হাতে থাকা ছুরি দিয়ে আশিকুরের পেটে আঘাত করেন। তাঁদের সঙ্গে থাকা মো. বাবুও ছুরিকাঘাত করেন। আশপাশের লোকজন জড়ো হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আশিকুরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে তিনি মারা যান।
ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ৯ জানুয়ারি আশিকুরের বড় ভাই জাহিদুর রহমান বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় মহিউদ্দিন, সাহাবু ও বাবুকে আসামি করা হয়।
জাহিদুর রহমান বলেন, আসামিরা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাঁর ছোট ভাই আশিকুর মা মণি ক্লাবের সদস্য ছিলেন। ক্লাবের পক্ষ থেকে এলাকায় মাদকবিরোধী পোস্টার-লিফলেট সাঁটানো হয়। ৫ জানুয়ারি আসামিরা তা ছিঁড়ে ফেলেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন আশিকুর। প্রতিবাদ করায় তাঁকে হুমকি দেন আসামিরা। পরে ৮ জানুয়ারি বিকেলে আসামিরা আশিকুরকে খুন করেন। জাহিদুর তাঁর ভাই হত্যার বিচার চান।
জাহিদুর এলাকায় রাজমিস্ত্রির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি ইট-বালু সরবরাহ করেন।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, জাহিদুরের ইট-বালুর ব্যবসায় আশিকুরও যুক্ত ছিলেন। আসামি মহিউদ্দিনেরও ইট-বালুর ব্যবসা আছে। এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে পূর্ববিরোধ ছিল। এই বিরোধ থেকে খুনের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। আশিকুরের সঙ্গে সাহাবু ও বাবুর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সাহাবু ও বাবু মহিউদ্দিনের হয়ে কাজ করতেন।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন আজ সকালে বলেন, পূর্ববিরোধের জেরে আশিকুর খুন হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এই খুনের পেছনে মাদকের প্রতিবাদ করার বিষয়টি আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ৯ জানুয়ারি দায়ের হওয়া মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে।
পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে আশিকুরের ময়নাতদন্ত হবে। ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।