বাবা শিক্ষাবোর্ড সচিব আর ছেলে এইচএসসি ২০২৩ পরীক্ষার্থী। ইচ্ছেমতো ফল জালিয়াতি করেছিলেন বাবা। সেই অভিযোগ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন ছাপে দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তা। অবশেষে আজ ২৩ সেপ্টেম্বর ওএসডি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সোমবার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে নারায়ন চন্দ্র নাথকে ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুবা ওইদিনই তিনি স্ট্যান্ড রিলিজ বা তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, ১৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে (ফৌজদারি মামলাসহ) মাউশির মহাপরিচালক ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। একইসাথে তার সঙ্গে জালিয়াতিতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সেদিন এ সংক্রান্ত পৃথক চারটি আদেশ জারি করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলাবিষয়ক শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব শতরুপা তালুকদার।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে পাঠানো এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সেসময় বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, চট্টগ্রামের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অঞ্চলের পরিচালক নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথের ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষার (বিজ্ঞান বিভাগ; রোল ১০৮৫৫৪) ফলাফল জালিয়াতি তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে। এ জালিয়াতিতে নারায়ণ চন্দ্র নাথ ও তার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
আরো পড়ুন: ফল জালিয়াতিতে অভিযুক্ত সেই সচিব নারায়ণ এখন কলেজ পরিচালক
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে বাংলা বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে ‘এ+’ পায় নক্ষত্র। তবে বাংলায় ‘এ’ গ্রেড পেলেও অতিরিক্ত বিষয়ের পয়েন্ট যুক্ত হওয়ায় সামগ্রিক ফলাফলে সে জিপিএ–৫ পায়। ওই বাংলা বিষয়ে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে গিয়ে নক্ষত্রের পরিবারের লোকজন দেখে আগে থেকে অনলাইনে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য কে বা কারা আবেদন করে দিয়েছে। তাও শুধু একটি বিষয়ে না, ১২টি উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করা হয়।
আরো পড়ুন : পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ
বিষয়টি নিয়ে বোর্ড সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের পাঁচলাইশ থানায় জিডি করেন। এটির তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীমের মোবাইল ফোন নম্বর রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে নক্ষত্র দেবনাথের নামে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনটি করা হয়েছিল।
বিষয়টি উল্লেখ করে গত ১৫ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পাঁচলাইশ থানা–পুলিশ। আদালতের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব আবদুল আলীম ও চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।