সরকারি চাকরির ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই আন্দোলন ঘিরে আনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে। কোটা বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে বেশকিছু সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ঈদের ছুটির পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন জোরদার হওয়ার সম্ভাব্যতার বিষয় তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
গত ঈদের আগে জমা দেয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সরকারি দলের কোনো কোনো নেতার মন্তব্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের যেকোনো ধরনের আন্দোলন একটি স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের মন্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ বাধা দিতে পারে এতে উভয়পক্ষে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এতে অতীতের মতো দায়ভার ছাত্রলীগের ওপর চাপিয়ে কোটা আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
প্রতিবেদনে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সন্নিহিত এলাকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা, সরকারবিরোধী চক্র ও স্বার্থান্বেষী মহল যাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে সতর্কতা বাড়ানো, আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীসহ সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন বিশেষ করে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাম ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের গতিবিধির প্রতি নজরদারি, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে আন্দোলনে মুখোমুখি অবস্থানে না যায় সে ব্যাপারে সতর্কতা বাড়ানো, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থান নিশ্চিত করা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় না জড়ানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করা, সড়ক-মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের যেকোনো ধরনের কর্মসূচি পালন রোধ এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ফোর্স মোতায়েন, মোতায়েনকৃত ফোর্সের যথাযথ ব্রিফিং এবং যেকোনো ধরনের উস্কানিতেও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ রোধে নজরদারি বাড়ানো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব রোধে সাইবার প্যাট্রোলিং জোরদার এবং সব গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত নজরদারি বাড়ানো।
প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। সে সময় কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমর্থন লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই আন্দোলনে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেলেও যথাযথ পদক্ষেপ গৃহীত না হলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে এই আন্দোলন সারা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ ঢাকার বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দিলে তারা শাহবাগ, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, সায়েন্সল্যাব মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন ইত্যাদি এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে পারে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আন্দোলনকালে রাস্তা অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের উপর হামলার চেষ্টা চালাতে পারে।
এতে বলা হয়, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী আন্দোলন গড়ে তুলতে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা বিভিন্ন ইস্যুতে ডাকা কর্মসূচিগুলোয় সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তারা নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা ও সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত করার অপপ্রয়াস চালাতে পারে। তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে বা গুজব ছড়িয়ে সারা দেশে আন্দোলন গড়ে তোলার অপচেষ্টা চালাতে পারে।
ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম ছাত্র সংগঠনসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কোনো নাশকতা বা শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় সরকারের উপর চাপানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।