জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ রফির মৃত্যুবার্ষিকী

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ রফির মৃত্যুবার্ষিকী আজউপমহাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ রফির মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি সংগীত ভুবনে সুদীর্ঘ চার দশক সময়কাল অতিবাহিত করেন। সংগীত কলায় অসামান্য অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় পদক এবং ৬-বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এছাড়াও, ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মশ্রী সম্মানেও অভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। প্রায় চল্লিশ বছর সময়কাল ধরে সংগীত জগতে থাকাকালীন ছাব্বিশ হাজারেরও অধিক চলচ্চিত্রের গানে নেপথ্য গায়ক বা প্লেব্যাক সিংগার হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন মোহাম্মদ রফি। তিনি বহুবিধ গানে অংশ নেয়ার বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তন্মধ্যে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান, বিরহ-বিচ্ছেদ, উচ্চ মার্গের প্রেম-ভালবাসা, কাওয়ালী, ভজন, গজল-সহ বিভিন্ন গোত্রের গানে দক্ষতা ও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন সমানভাবে। বিশেষ করে হিন্দি এবং উর্দু ভাষায় সমান দক্ষতা থাকায় তার গানগুলোতে বৈচিত্র্য এসেছে সমধিক।

হিন্দিসহ কোনকানি, উর্দু, ভোজপুরী, উড়িয়া, পাঞ্জাবী, বাংলা, মারাঠী, সিন্ধী, কানাড়া, গুজরাটি, তেলুগু, মাঘী, মৈথিলী, অহমীয়া ইত্যাদি ভাষায় তিনি গান গেয়েছেন। এছাড়াও আরও গান গেয়েছেন - ইংরেজি, ফার্সী, স্প্যানিশ এবং ডাচ ভাষায়।
মোহাম্মদ রফি ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব এলাকার অমৃতসর গ্রামের কাছাকাছি কোটলা সুলতান সিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। রফি'র ডাক নাম ছিল ফিকো। তার নিজ গ্রামে এক ফকিরের ভজন গানকে অনুকরণ করে গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। জীবিকার সন্ধানে তার বাবা হাজী আলী মোহাম্মদ ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে লাহোরে চলে যান এবং ভাট্টি গেটের নূর মহল্লায় একটি স্যালুনের মালিক হন।

তার বড় ভাই মোহাম্মদ দ্বীনের বন্ধু আবদুল হামিদ লাহোরে অবস্থানকালীন সময়ে রফি'র সংগীত প্রতিভা দেখে তাকে গান গেতে সাহস জুগিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রফি'র শ্যালক হয়েছিলেন। আবদুল হামিদ পরবর্তী সময়ে তার পরিবারের বড়দের কাছ থেকে সম্মতি আদায় করে তাকে মুম্বাই পাঠান। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মদ রফি বোম্বেতে গেলে সঙ্গী হিসেবে তার সঙ্গে আবদুল হামিদও গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি উস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান, উস্তাদ আব্দুল ওয়াহিদ খান, পণ্ডিত জীবনলাল মত্তো এবং ফিরোজ নিজামী'র মতো প্রথিতযশা শিল্পীদের কাছ থেকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেন।
১৩ বছর বয়সে রফি লাহোরের প্রথিতযশা শিল্পী কে. এল. সাইগলের সঙ্গে জীবনের প্রথম দর্শক-শ্রোতাদের মুখোমুখি হয়ে কনসার্টে গান পরিবেশন করেন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে শ্যাম সুন্দরের নির্দেশনায় লাহোরে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নিজেকে অভিষেক ঘটান। পাঞ্জাবী ভাষায় নির্মিত ‘গুল বালুচ’ চলচ্চিত্রে জিনাত বেগমের সঙ্গে দ্বৈত সঙ্গীত ‘সোনিয়ে নি, হেরিয়ে নি’ গানটি গান। একই বছরে মোহাম্মদ রফি অল ইন্ডিয়া রেডিও'র লাহোর সম্প্রচার কেন্দ্রে গান পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ পান।

১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মদ রফি বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) চলে আসেন। তার শ্যালক সেখানে তাকে ভেন্দী বাজারের মতো ব্যস্ততম এলাকায় দশ ফুট বাই দশ ফুট কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করেন। সেখানে তানভীর নাকভী নামীয় একজন কবি - আবদুর রশীদ কারদার, মেহবুব খান এবং অভিনেতা-পরিচালক নাজিরের মতো চলচ্চিত্র পরিচালকের সঙ্গে রফিকে পরিচয় করে দেন। শ্যাম সুন্দর তখন মুম্বাইয়ে অবস্থান করছিলেন। তিনি রফিকে আবারো জিএম দুররানী'র সঙ্গে দ্বৈত সংগীতে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান। 

ভারত বিভাজনের সময় মোহাম্মদ রফি ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। ফলে তার পরিবারও বোম্বেতে চলে আসে। কিন্তু ঐসময়কার অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নূরজাহান পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হবার সিদ্ধান্ত নেন। নূরজাহান সেখানে আহমেদ রুশদী'র সঙ্গে নতুন করে সংগীত জুটি বাঁধেন।

রফি ঐ সময়ের জনপ্রিয় সংগীততকার হিসেবে কুন্দন লাল সায়গল, তালাত মেহমুদের গানগুলো ভীরভাবে অনুসরণ করেন। তবে সবচেয়ে বেশি অনুরক্ত ও প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন জি. এম. দূররাণী'র প্রতি, যার গানগুলোকে নিজের গানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। 

মোহাম্মদ রফি তার সুদীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে অনেক নামকরা সঙ্গীত পরিচালকের দিক-নির্দেশনায় বিভিন্ন ধরনের গান গেয়েছেন। তন্মধ্যে অমর সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নওশাদের পরিচালনায়ই গান গেয়েছেন বেশি। এছাড়াও, ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে মোহাম্মদ রফি ও.পি. নায়ার, শঙ্কর জয়কিষাণ এবং এস.ডি.বর্মনের সুরেও অনেক গান গেয়েছেন।
মোহাম্মদ রফি ১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে ঐ দশকের প্রথম কয়েক বছরে খুব কমসংখ্যক গানই রেকর্ড করতে পেরেছিলেন তিনি। মোহাম্মদ রফি ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030310153961182