জবিতে বুঝে নেয়ার দেড় বছরেই ১৩ তলা ভবনে ফাটল

জবি প্রতিনিধি |

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১৩ তলা নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের দেড় বছরের মাথায়ই ফাটল ধরেছে। ৯টি দপ্তর ও ১৯টি বিভাগসহ এ ভবনে রয়েছে সব ডিন অফিস, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম ও শিক্ষকদের ক্যান্টিন। প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে প্রায় ৮ হাজারের বেশি মানুষ ভবনটিতে অবস্থান করেন। সবচেয়ে জনবহুল এ ভবন নির্মাণের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তা বুঝে নেয়। ফাটলের কারণ হিসেবে নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারকে দুষছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরা। তবে ভবন হস্তান্তরের ১ বছর হয়ে যাওয়ায় ফাটলের দায় নিচ্ছে না নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারর্স এন্ড দেশ উন্নয়ন লিমিটেড’ (জেপি)। এদিকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর দুষছে ভূমিকম্পকে।

সরজমিনে দেখা যায়, নতুন একাডেমিক ভবনের ১৩ তালায় পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কার্স দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মঞ্জুর হোসেনের কক্ষের ভেতরে পিলার ও ছাদের বিমে দীর্ঘ ফাটল ধরেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র ও এর আগে প্রকাশিত একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালে ভবনটির ৭ তলা পর্যন্ত করা হয়েছিল।
এরপর সেটি ২০ তলা স¤প্রসারণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় কয়েক বছরের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয়। তখন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়, ১৩ তলা পর্যন্ত এ ভবন স¤প্রসারণ করা যাবে। সেই অনুযায়ী টেন্ডার আহ্বান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ৮ বার টেন্ডার আহ্বানেও কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি। পরে ২০১৪ সালের শেষের দিকে কাজটি পায় ‘দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারর্স এন্ড দেশ উন্নয়ন লিমিটেড’ (জেপি)। এ প্রতিষ্ঠান ৫ বার মেয়াদ বাড়িয়ে ৮ বছরে ভবনটির উপরে স¤প্রসারিত ৬ তলার কাজ শেষ করে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভবনটির নির্মাণের সময় নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৌশলীরা নানা সময় এসব অনিয়ম হাতে-নাতে ধরেছেন। একবার মেঝে ঢালাইয়ে পাথরের পরিবর্তে ইটের খোয়া দেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রকৌশলী ধরে ফেলেন। বস্তা বোঝাই করে সেই ইটের খোয়া সাবেক উপাচার্য মিজানুর রহমানকে দেখানো হয়। কিন্তু তবুও নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারীর সঙ্গে ফাটলের বিষয়ে তার কক্ষে কথা বলতে গেলে দেখা যায় সেখানেও দেয়ালে চিকন ফাটল। তবে সেটি প্লাস্টারের ফাটল বলে জানান তিনি। পরে ১৩ তলায় বড় ফাটলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তবে সরজমিনে ফাটল পেলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানাব। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে জামানতের টাকা না দেয়া হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারর্স এন্ড দেশ উন্নয়ন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভবন বুঝিয়ে দিয়েছি। এক বছরের বেশি হয়ে গেছে। এর ভেতরে কিছু হলে আমরা দেখতাম। আমরা আমাদের জামানতও তুলে ফেলেছি। এত কম সময়ে ভবনের ফাটল কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই প্রতিষ্ঠানে এখন চাকরি করি না। এ বিষয়ে আমি কথা বলতে রাজি নই। 

এদিকে ভবনটির নির্মাণকাজের সময় সার্বক্ষণিক দেখভালে নিয়োজিত থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) উপসহকারী প্রকৌশলী সামসুল আলম বলেন, ভবনটি ২০ তলা করার কথা ছিল। কিন্তু বেজমেন্ট পরীক্ষা করে তা দুর্বল থাকায় ১৩ তালা পর্যন্ত করা হয়েছে। ভবনের কাজে কোনো নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়নি। আমাদের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী টিম সার্বক্ষণিক কাজ দেখেছে। তারা তখন কোনো অভিযোগ করেনি। ফাটল ভূমিকম্পেও হতে পারে। কোনো অভিযোগ এলে আমরা বিষয়টি দেখব।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি পুরনো ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে রাজউক। নতুন একাডেমিক ভবনের এ ফাটল ভূমিকম্পের কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলবে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুলে ভর্তির আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha স্কুলে ভর্তির আবেদন করবেন যেভাবে ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে ঢাকায় আসছেন ফিফা সভাপতি - dainik shiksha ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে ঢাকায় আসছেন ফিফা সভাপতি ঘুষ চাওয়ায় ধোলা*ই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাকে - dainik shiksha ঘুষ চাওয়ায় ধোলা*ই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাকে লটারির বাইরে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নির্দেশনা - dainik shiksha লটারির বাইরে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নির্দেশনা ভর্তি হবে সন্তান, জন্মসনদের চক্রাকার ভোগান্তিতে বাবা-মা - dainik shiksha ভর্তি হবে সন্তান, জন্মসনদের চক্রাকার ভোগান্তিতে বাবা-মা একাদশের শিক্ষার্থীদের টিসির আবেদন শুরু ১৭ নভেম্বর - dainik shiksha একাদশের শিক্ষার্থীদের টিসির আবেদন শুরু ১৭ নভেম্বর বাংলাপ্রেমী শিক্ষক উইলিয়াম রাদিচে আর নেই - dainik shiksha বাংলাপ্রেমী শিক্ষক উইলিয়াম রাদিচে আর নেই কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002938985824585