জবির আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে হয়*রানির অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, জবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) এবার ছাত্রীর সঙ্গে অপ্রীতিকর অবস্থায় আটকের পর বিয়ে, অসৌজন্যমূলক আচরণে দুই ছাত্রীর লিখিত অভিযোগ, ক্লাসে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তিসহ নানা অভিযোগ মিলেছে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু সালেহ সেকান্দারের বিরুদ্ধে।এসব অভিযোগের কারণে তাকে একাডেমিক সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ও অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।  তবু তিনি ‘আরও বেপরোয়া’ হয়ে উঠেছেন অভিযোগ তুলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল ও জবি শিক্ষক সমিতি। 

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত ২০১২ খ্রিষ্টব্দের ৮ জানুয়ারি। সেদিন বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের এক ছাত্রীকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে গিয়ে শিক্ষক সেকান্দার অপ্রীতিকর অবস্থায় আটক হন। তাকে আটক করে জাবির প্রক্টর অফিসে জানান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর জাবির তৎকালীন প্রক্টর আরজ মিয়া, জবি শিক্ষক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও জাবির শিক্ষক ড. ইমরান জাহানসহ একাধিক শিক্ষকের সামনে সেকেন্দার বিয়ের মুচলেকা দিলে দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে সেই ছাত্রীকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেন সেকান্দার। এ কারণে ওই শিক্ষকের ক্লাস করতে অপারগতা প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তার পরিণতিতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বিপর্যয় ঘটানোর অভিযোগ ওঠে সেকান্দারের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ওই ছাত্রী সেকান্দারকে ডিভোর্স দিয়েছেন বলে জানা গেছে।  

এছাড়া শিক্ষক আবু সালেহ সেকান্দারের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের লিখিত অভিযোগ দেন সাবিকুন্নাহার রিপা ও ফারজানা নাজনীন নামে বিভাগের দুই ছাত্রীসহ চারজন। পরে এই শিক্ষকের ক্লাস করতে চান না মর্মে আরও ২২ জন শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দেন। এসব অভিযোগে ২০১৯ খ্রিষ্টব্দে বিভাগটির ৭১তম একাডেমিক কমিটি একাডেমিক সব কার্যক্রম থেকে সেকান্দারকে অব্যাহতি দেয়।  

অভিযোগ উঠেছে, ওই সিদ্ধান্তের পরপরই একের পর এক সিনিয়র শিক্ষক, ডিন, প্রক্টর, ভিসিদের বিরুদ্ধে আবু সালেহ সেকান্দার ফেসবুকে অশালীন পোস্ট দিতে থাকেন। পোস্টে শিক্ষকদের ‘চোর’, ‘বাটপার’সহ নানা কটূক্তি ও গালাগাল করতে থাকেন। তার এহেন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষকরা।

২০২২ খ্রিষ্টব্দের ২৬ অক্টোবর ৯৭তম একাডেমিক সভায় ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সব শিক্ষক স্বাক্ষর করে উপাচার্য বরাবর আবেদন করে সিকান্দারের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল সেকান্দারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বলে।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমান বলেন, আবু সালেহ সেকান্দারের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অভিযোগ, ক্লাসে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি, অপ্রীতিকর ঘটনায় ছাত্রীকে বিয়েসহ নানা ঘটনায় কেউ তার ক্লাস করতে চায় না। তাই একাডেমিক কাজ থেকে তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এরপর তিনি মানসিক যন্ত্রণায় ফেলে দিয়েছেন শিক্ষকদের। তার জ্বালায় সুইসাইড করার মতো অবস্থা আমার। তার বিচার চাই।

সেকান্দারের ফেসবুক পোস্টে ‘মানহানির শিকার’ হয়েছেন জানিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, আমাকে নিয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেছে, একটি বিভাগের পিএইচডি সেমিনারে নাকি এক্সটার্নাল হিসেবে ছিলাম। এটা মিথ্যা। সব সেমিনারে ডিনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তার বিচার হওয়া উচিত।  

এছাড়া সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান, প্রয়াত উপাচার্য ড. ইমদাদুল হক, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ, সাবেক প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল, বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মিল্টন বিশ্বাস, ভূগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাহীসহ অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক পোস্ট দিতে দেখা গেছে সেকান্দারকে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু সালেহ সিকান্দার বলেন, ‘কোন কোন বিষয়ে সংবাদ হয় জানেন আপনি? আপনার এডিটরকে আমাকে ফোন দিতে বলেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘উনি (সিকান্দার) অনেক সিনিয়র শিক্ষক, ডিনদের বিরুদ্ধে অশালীন ও মিথ্যা ফেসবুকে পোস্ট দেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান। ’

জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, ‘এভাবে অসত্য ও অশালীনভাবে লিখে এত শিক্ষক ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মানহানি করা অপরাধ। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷ আমরা শিক্ষক সমিতির সভায় বিষয়টি তুলব। ’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে - dainik shiksha একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের - dainik shiksha ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম - dainik shiksha থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান - dainik shiksha প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039811134338379