নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে জমি জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। জমির মালিকের ভুয়া স্বাক্ষর ও টিপসই ছাড়াই ভুয়া দলিলে রাজধানীর কাওলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হয়েছে । মালিককে শনাক্ত করে ভুয়া কাগজ জমা দেন দৈনিক ভোরের পাতা পত্রিকার সম্পাদক কাজী এরতেজা হাসান ও বিশ্ববিদ্যালয়টির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলছে, মামলা হলে দেওয়ানি না ফৌজদারি, কোন ধারায় বিচার হবে সে বিতর্ক তুলে ৬ বার আদালতের সময় নষ্ট করেছে আসামিপক্ষ। পরে আদালতের নির্দেশে পিবিআইয়ের তদন্ত শেষে বিচার চলছে সিএমএম কোর্টে।
একসময়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ছিল নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাস্পাস। স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫ বিঘা জমি কেনে আশিয়ান ল্যান্ড ডেভলপমেন্টের নজরুল ইসলামের কাছ থেকে। জমির দাম ৫০ কোটি টাকা।
২ কিস্তিতে ৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্ট এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক প্রসাদ নির্মাণ। বাকি টাকা দিয়ে ৩ মাসের মধ্যে জমির রেজিস্ট্রেশন করার কথা ছিল।
জমি রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব নেন দৈনিক ভোরের পাতা পত্রিকার সম্পাদক কাজী এরতেজা হাসান। কারওয়ান বাজারে নিজের পত্রিকা অফিসে ভুয়া লোককে জমির বিক্রেতা বানান। টিআই বইয়ে স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক হলেও, সাব রেজিস্টারকে টিপসই ছাড়াই দলিল তৈরিতে বাধ্য করেন এরতেজা। পিবিআই বলছে, দাতা টিপসই দিতে চাননি বলে উল্লেখ করেছেন সাব রেজিস্টার।
আশিয়ান গ্রুপের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তখন তারা (অভিযুক্তরা) বলেছে চেয়ারম্যান সাহেব আছেন ভেতরে, আপনারা সাইন টাইন করেন, আমরা এটা করে দেবো। পরে ভেতরে নিয়ে গিয়ে সাইন টাইন করে ওনাদেরকে দিয়ে দেন। বলেন যে, চেয়ারম্যান সাহেব সাইন করে দিয়েছে এটা। আশিয়ানের চেয়ারম্যান সাইন করেছে বলে পরে ওনাদেরকে ওখান থেকে নিয়ে যায়।’
মালিককে শনাক্ত করে ভুয়া কাগজ জমা দেন এরতেজা ও নর্দানের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ। মামলার ৪ নং আসামি কাজী এরতেজার অফিসে গেলেও তিনি দেখা করেননি।
মামলার প্রধান আসামি নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ'র এই পরিচালক ভুয়া কাগজে বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন। বারবার যোগাযোগেও তিনি সাড়া দেননি।
পিবিআই বলছে, মামলা বিলম্বিত করতে ৬ বার উচ্চ আদালতে গেছে আসামিপক্ষ। চার্জশিটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও তারা সময় নষ্ট করেছে।
সংস্থাটির প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘হাইকোর্ট বিভাগ শুনানীতে বলেছেন যে, মামলাটি চলতে কোনো বাধা নেই। সাক্ষ্য প্রমাণে ভিত্তিতে ঠিক হবে এটা দেওয়ানি, না ফৌজদারি মামলা হবে। জমি সংক্রান্ত দেওয়ানি মামলার মধ্যেই একটি ফৌজদারি মামলা লুকিয়ে থাকে। আমরা এটি এখান থেকে বের করার চেষ্টা করছি।’
প্রভাব খাটিয়ে সরকারি দলিল কমিশনিংয়ের ঠিকানাও পরিবর্তন করেন আসামিরা।