জমি নেই তবু ভবন নির্মাণের অনুমোদন, দায় নিচ্ছে না কেউ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জামালপুরের সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজে ছয়টি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে প্রকল্পের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও পাঁচটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এখন বলা হচ্ছে, ভবন নির্মাণের পর্যাপ্ত জমি ছিল না। তারপরও এই প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। বাধ্য হয়ে এখন পরিকল্পনা বদলাতে হয়েছে। কমিয়ে আনা হচ্ছে ভবনগুলোর প্রস্তাবিত আকার। শুধু জামালপুরে নয়, মোট নয়টি কলেজে একই ঘটনা ঘটেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে এই নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন প্রদীপ সরকার।

শুরুতেই গলদ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘নির্বাচিত ৯টি সরকারি কলেজের উন্নয়ন’ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। কলেজগুলোয় ভবন নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৬২৯ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

এ প্রকল্পের আওতায় সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজে ছয়টি ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও শুধু প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলেজের জমি না থাকায় পাঁচটি ভবনের নির্মাণকাজ করা যায়নি। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্রকল্পটি প্রণয়ন ও অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর সম্ভাব্যতাও যাচাই করা হয়নি। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

কলেজটির অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ জানান, একটি জলাশয় ও ছোট একটি মাঠ ছাড়া কলেজে ফাঁকা জায়গা নেই। ছয় তলাবিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য জলাশয়ের আংশিক ভরাট করা হয়েছে। এটি ভরাট করে একাধিক ভবন নির্মাণ করা হবে। আরও জায়গা বের করার জন্য পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ছাত্রীনিবাস ভাঙা হবে।

শিক্ষা প্রকৌশলের কর্মকর্তারা জানান, বাকি পাঁচটি ভবনের আকার কমিয়ে আনা হয়েছে। এই কলেজের যে পরিমাণ জমি আছে, সেখানেই বাকি ভবন নির্মাণ করা হবে। তবে আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ  বলেন, ‘পর্যাপ্ত জমি না রেখে বা জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা না করে ভবন নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা ঠিক হয়নি।’ 

প্রকল্প সংশোধন, ব্যয় কমেনি
মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও প্রকল্পটির সামগ্রিক অগ্রগতি ২০ শতাংশেরও কম। জমি না থাকায় জামালপুরের এই কলেজসহ প্রকল্পের আওতায় থাকা কলেজগুলোর মোট ২৫টি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই ২৫টি ভবনের আকার কমানোর সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। কলেজগুলোর যে জমি আছে সেখানেই আকারে ছোট করে ভবনগুলো নির্মাণ করা হবে। তবে কমানো হয়নি প্রকল্পের ব্যয়। মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও এই প্রকল্পের পরিচালক আবুল হাসেম সরদার বলেন, জমির সংকটে ২৫টি ভবনের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধনের প্রস্তাব পাঠানো হলে সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এর অনুমোদনও দিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন আর কোনো সমস্যা নেই।

প্রকল্পের ব্যয় না কমানোর বিষয়ে আবুল হাসেম সরদার জানান, তাঁরা কাজ করে যাবেন। নির্মাণকাজ শেষ হলে চূড়ান্ত হিসাব বের করা হবে।

দায় নিচ্ছেন না কেউ
পর্যাপ্ত জমি না রেখে বা জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা না করে ভবন নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দের দায় এখন কেউ নিচ্ছেন না। প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আরিফুর রহমান এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী বুলবুল আখতার বলেন, ‘প্রকল্পটি আমাদের না। আমরা কেবল বাস্তবায়ন করছি। এটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রকল্প। তাদেরই সব লোকজন। আপনি চাইলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এখনো আসেনি। আমি খোঁজ নেব। অনিয়ম হলে নমনীয়তা দেখানো হবে না।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052578449249268