আগামী ২১ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩২ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ ৩২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ। প্রতিষ্ঠার এতো বছর পরেও, নামসর্বস্ব কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স চালু, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক ও অবকাঠামো ছাড়াই সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে বিষয়ের অনুমোদন, বিষয় প্রতি ২০০-৩০০ জন শিক্ষার্থী অনুমোদন, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, একই প্রশ্ন বারবার পরীক্ষায় আসা, উত্তরপত্র মূল্যায়নের মান, সময়োপযোগী কারিকুলাম, যথাযথ একাডেমিক মনিটরিং এবং সর্বোপরি উচ্চ শিক্ষার মান নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি অ্যাপেক্স বডি এবং শুধুমাত্র একটি অ্যাফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে উচ্চশিক্ষার অ্যাপেক্স বডি হিসেবে বিবেচনা করা যায়, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে নয়। বিশ্ববিদ্যালয় নামের সঙ্গেই শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম তার নিজস্ব আইনি কাঠামোর মধ্যেই পরিচালিত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি শুধুমাত্র একটি অ্যাপেক্স বডি হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়, তাহলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ১৯৯২ সংশোধন করে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটির নাম পরিবর্তন করা যেতে পারে, এবং প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদের নাম পরিবর্তন করে অ্যাপেক্স বডির চেয়ারম্যান নামকরণ করা যেতে পারে ।
সম্প্রতি হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় এক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। বছরে প্রায় এক কোটি সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। কিসের সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে, কী লেখাপড়া হচ্ছে একমাত্র আল্লাহই জানেন। এর ভেতর দিয়েই আমাকে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমার প্রশ্ন, গত ৩২ বছর যাবৎ যে কাঠামোতে পরিচালিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি, নতুন বাংলাদেশে যেখানে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টি যদি আগের মতোই পরিচালিত হয়, উচ্চতর বোর্ড থেকে এটা যদি বিশ্ববিদ্যালয় হতে না পারে, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের মূল উপাদানগুলোকেই যদি অগ্রাহ্য করা হয়, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্ব যদি শিক্ষকদেরকেই দেয়া না হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ১ম সংবিধি (যা চ্যান্সেলরের অনুমোদন ব্যতীত সংশোধন বা বাতিল করা যাইবে না) পাশ কাটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন বিধি দিয়ে যদি অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্র ভর্তি, পরীক্ষা গ্রহণ ও একাডেমিক মনিটরিংয়ের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, তাহলে আগামী ৩২ বছরেও কি এ বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চশিক্ষার ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর গুণগত ও সময়োপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে? যদি তা না হয়, তাহলে আগামীর বাংলাদেশ কি এই শিক্ষার্থীদের দায়ভার বহন করতে পারবে?
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)