জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের গুরুত্ব

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: আজ ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। প্রতিবছরের মতো এ বছরও দিবসটি দেশব্যাপী যথেষ্ট উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে পালিত হচ্ছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদানকল্পে সরকার ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রণয়ন করে। গরিব ও নিঃস্ব মানুষ যাতে আইনের আশ্রয় লাভের জন্য আদালত পর্যন্ত এসে পৌঁছাতে পারে তার ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে করতে হয়। রোববার (২৮ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধনে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, মূলত এ জন্যই আইনগত সহায়তার সৃষ্টি। গরিব, নিঃস্ব, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যারা আর্থিক কিংবা অন্যান্য আর্থ-সামাজিক কারণে আইনের আশ্রয় নিতে অক্ষম, তাদের সরকারি আইনি সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ করে দেয়।
জনহিতকর কাজের মধ্য নিয়ে সমাজের কল্যাণ সাধন করা রাষ্ট্রের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আইনগত সহায়তা কার্যক্রম একটি জনকল্যাণমূলক সামাজিক কর্মসূচি। 

আইন কখনো মানুষে মানুষে বৈষম্যকে সমর্থন করে না। পৃথিবীর সব মানবাধিকার দলিলে আইনগত সহায়তা পাওয়ার অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ১২১৫ খ্রিষ্টাব্দে রচিত ম্যাগনা কার্টার ৩৯ এবং ৪০ অনুচ্ছেদে, ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত মানবাধিকার সর্বজনীন ঘোষণার ৭, ৮ ও ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে, ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে গৃহীত নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে, ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে গৃহীত মানবাধিকারবিষয়ক আফ্রিকার সনদের ৩ ও ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে, ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে গৃহীত ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে আইনগত সহায়তা, সমতা ও সুবিচারকে মানবাধিকার হিসেবে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা আছে।
বর্তমান সময়ে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের সংবিধানেই সমতা ও বিচার প্রাপ্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’
আর্থিক অভাবের কারণে কোনো নাগরিক আইনের আশ্রয় নিতে পারবে না, এটি কোনোভাবেই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র হতে পারে না। প্রকৃত পক্ষে, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক যদি আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়, তবে সংবিধানে বর্ণিত আইনের শাসন, সমতা, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের বিধান অর্থহীন হয়ে পড়বে। সে জন্যই গরিব, অসহায় সব মানুষ যেন আইনি প্রতিকার পেতে পারে এবং আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে, মামলা পরিচালনার খরচ নামমাত্র মূল্যে বা বিনা মূল্যে পেতে পারে, সে জন্যই রয়েছে আইনগত সহায়তা।

সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতেও উচ্চারিত হয়েছে মানবাধিকার ও সাম্যের স্লোগান।

রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূল নীতি হিসেবে সংবিধানের ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে।’
রাষ্ট্র পরিচালনার অপরিহার্য একটি মূলনীতি হিসেবে ১৯(১) নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে।’

সকল নাগরিককে নীতিগতভাবে আইনের দৃষ্টিতে সমান বলা হলেও সামাজিক বৈষম্য ও আর্থিক অসংগতি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করে। ধনী ও সচ্ছল মানুষের পক্ষে আইনের আশ্রয়লাভ করা যতটা সহজ, দরিদ্র মানুষের পক্ষে ততটাই কঠিন। সমাজের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ আইনের সমতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং জনগণকে ন্যায়বিচার তথা আদালতে প্রবেশে সক্ষম করার জন্য দরকার আইনগত সহায়তাব্যবস্থা।

সংবিধানের ২৮(১) নম্বর অনুচ্ছেদে ‘মৌলিক অধিকার’ অংশে আরো পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না।’

সংবিধানের ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যেকোনো স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সামরিকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।’

সংবিধানের ৩৩(১) নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘গ্রেপ্তারকৃত কোনো ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শিগগিরই গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাঁহার আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না।’

প্রাচীন বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের ধ্যান-ধারণার উদ্ভব ঘটলেও কালক্রমে তা আরো বিকশিত হয়। আধুনিক যুগে আইনগত সহায়তা, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ব্যাপক উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। আইন ও মানবাধিকারসংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিলগুলো মানুষের মধ্যকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। মানবাধিকারের আধুনিক ধারণা অনুযায়ী মানুষের আর্থিক দীনতা, সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষকে অথবা ধর্ম, বর্ণ বা গোত্রগত কারণে কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।

‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’-এর আওতায় সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার একই বছর ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’ নামে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে। উক্ত সংস্থার অধীনে এরই মধ্যে দেশের ৬৪টি জেলায় জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির পাশাপাশি সারা দেশের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

বর্তমানে ওই সংস্থার তত্ত্বাবধানে সুপ্রিম কোর্ট কমিটি, জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি এবং ইউনিয়ন কমিটি আইনগত সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রম আদালত ও চৌকি আদালতগুলোতেও সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রত্যেক জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে ‘জেলা লিগ্যাল এইড অফিস’ স্থাপন করা হয়েছে। ‘লিগ্যাল এইড অফিস’কে আরো কার্যকর, গতিশীল ও সেবাবান্ধব করার লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ/সহকারী জজ পদমর্যাদার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের (প্রেষণে) পদায়ন করা হয়েছে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসাররা আইনগত সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি বিনা মূল্যে আইনগত পরামর্শ প্রদান করেন এবং পক্ষগণের মধ্যকার বিরোধ বা মামলা বিকল্প পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করে থাকেন।

উল্লেখ্য, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০-এর ৭(ক) ধারা অনুসারে আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা, ২০০১-এর ২৪ ধারা অনুসারে আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধান মালা ২০০১ প্রণয়ন করা হয়। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন, দায়িত্ব, কার্যাবলি ইত্যাদি) প্রবিধানমালা ২০১১ প্রণয়ন করা হয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের নীতিমালা বাতিল করে আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা ২০১৪ এবং ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের প্রবিধানমালা বাতিল করে আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধানমালা ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়। এ ছাড়া ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে আইনগত সহায়তা প্রদন (আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) বিধিমালা ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়।

সীমিত পরিধির আইনি সেবা থেকে বেরিয়ে বর্তমানে আইনগত সহায়তার ক্ষেত্র ও পরিধি অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে যেসব আইনগত সহায়তা দেওয়া হয় তা হলো :

আইনগত সহায়তা প্রদান, বিনা মূল্যে ওকালতনামা সরবরাহ, আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে মামলা মোকদ্দমা পরিচালনা, আইনজীবীদের ফি পরিশোধ, মধ্যস্থতাকারী বা সালিসকারীর সম্মানী পরিশোধ, ফিক্সড কোর্ট ফি পরিশোধ, বিনা মূল্যে রায় কিংবা আদেশের অনুলিপি সরবরাহ, ডিএনএ টেস্টের যাবতীয় ব্যয় পরিশোধ, ফৌজদারি মামলায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যয় পরিশোধ, মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক সব ব্যয় পরিশোধ এবং হটলাইনের মাধ্যমে তথ্য সেবা প্রদান।

উল্লেখ্য, শুধু সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগের মধ্যে লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের আপামর জনসাধারণের আইনি সমস্যা সহজে নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের আইনি পরামর্শ প্রদান ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে আপসযোগ্য বিরোধ নিরসনের ক্ষমতা দেওয়া হয়। ফলে যেকোনো আয়সীমার মানুষ আইনি পরামর্শ নিতে এবং আপসযোগ্য বিরোধ মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের জন্য জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের শরণাপন্ন হতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মীমাংসা বা এডিআর ছাড়া সফলভাবে লিগ্যাল এইডের সেবা দেওয়া সম্ভব না। এ কারণে লিগ্যাল এইড অফিসকে ঘিরে একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। লিগ্যাল এই অফিসের মাধ্যমে এডিআর বা মীমাংসা পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ সংশোধন করে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে লিগাল এইড অফিসারকে আইনি কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং একই সঙ্গে লিগ্যাল এইড অফিসারকে বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষমতা প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০-এর ২১(ক) ২ ধারা অনুযায়ী লিগ্যাল এইড অফিসার আইনগত সহায়তা প্রার্থীকে আইনি পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন এবং প্রচলিত আইনের অধীন কোন আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক উহার স্থানীয় অধিক্ষেত্রের আওতাধীন এলাকায় কর্মরত লিগ্যাল এইড অফিসারের নিকট বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পতির জন্য কোন বিষয় প্রেরণ করা হলে উহা নিষ্পত্তির ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট লিগ্যাল এইড অফিসারের থাকবে।

এ ছাড়া ওপরে বর্ণিত আইনের ধারা ২১(ক)-এর উদ্দেশ্য পূরনোর জন্য লিগ্যাল এইড অফিসার কর্তৃক পরিচালিত বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি তথা মধ্যস্থতা বা মীমাংসার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণকল্পে আইনগত সহায়তা প্রদান (আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) বিধিমালা ২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, জেলা লিগ্যাল এইড অফিস, চট্টগ্রাম কর্তৃক ২৮ এপ্রিল ২০২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২৮ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিম্নে বর্ণিত মতে আইনি সহায়তা কার্যক্রম সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়।

ক) জেলা লিগ্যাল এইড অফিস, চট্টগ্রামের ২৮ এপ্রিল ২০২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২৮ এপ্রিল ২০২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আইনি সহায়তা কার্যক্রম প্রতিবেদন :

৩) অনুবেদনাধীন সময়ে অন্যান্য কার্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
ক) লিগ্যাল এইডের সহায়তায় পরিচালিত মামলার মধ্যে ৩৭০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়।
খ) এডিআরের মাধ্যমে ১,৫১,১০,৪২০/- টাকা আমার করে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে প্রদান করা হয়েছে।

এ ছাড়া বিগত ১৮ নভেম্বর ২০২৩ খ্রি. তারিখে কারাবন্দিদের স্মার্ট আইনি সেবা সহজীকরণে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে ‘‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার বিদ্যালয় লিগ্যাল এইড কর্নার’’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক এক গণশুনানির ব্যবস্থা করা হয়, যার মাধ্যমে কারাগারে অন্তরীণ কারাবন্দিগণ খুব সহজেই আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয়ে বরং কারাগারের অভ্যন্তরেই আইন ও বিধি মোতাবেক আইনি সেবা পেতে সমর্থ হবেন।  চাট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জনাব মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই উদ্বোধনী ও প্রাতিষ্ঠানিক গণশুনানি অনুষ্ঠানে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য চট্টগ্রামের সম্মানিত জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী এবং চট্টগ্রামের বিজ্ঞ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো. রবিউল আলম ছাড়াও জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়্যারম্যান ড. আজিজ আহমদ ভূঞা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি চট্টগ্রাম কর্তৃক প্রথমবারের মতো এই লিগ্যাল এইড কর্নারের কার্যক্রম শুরু করার মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলার লিগ্যাল এইড কার্যক্রম আরো গতিশীল ও বেগবান হবে মর্মে আশা করা যায়। একই তারিখে কারাগারে উক্ত প্রতিষ্ঠানিক গণশুনানি শেষে কারাবন্দিদের বিনোদনের জন্য দুটি এলইডি টিভি বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক জনাব আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমদ ভূঞা।

চট্টগ্রামের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার জনাব মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন মসজিদে ইমাম-খতিবদের অংশগ্রহণে বিগত ৩০-১২-২০২৩ খ্রি. তারিখ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতাধীন ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি চট্টগ্রামের সহায়তায় এক সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করেন। বিগত ০৪ এপ্রিল ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখে চট্টগ্রামের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের কার্যালয়ের স্মার্ট মেডিয়েশন রুমে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে এক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজনসহ প্রতিযোগীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়, যা খুবই প্রাণবন্ত ছিল। বিগত ২৪-০৩-২০২৪ খ্রি. তারিখে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস চট্টগ্রাম কর্তৃক উপকারভোগীদের (আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের) অংশগ্রহণে এক সমন্বয় সভার আয়োজন করে, যার মাধ্যমে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যু বাহিনীদের সরকারের অঙ্গীকারকৃত আইনি সেবা প্রদান করা হয়। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখিল ইউপিতে কধুরখিল গ্রামের অধিবাসীদের নিয়ে বিগত ০৫-১২-২০২৩ খ্রি. তারিখে আইনি সচেতনতামূলক এক উঠান বৈঠক পরিচালনা করেন চট্টগ্রামের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) জনাব মুহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল।

দেওয়ানি বিরোধের ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড অফিসার সরেজমিনে গিয়ে অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সার্ভে কমিশনারের উপস্থিতিতে বিবদমান পক্ষদের নিয়ে জমি পরিমাপকরত তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব চিরতরে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাকলিয়া ওয়ার্ড কার্যালয়ে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার কর্তৃক বিগত ১৩-১২-২০২৩ খ্রি. তারিখে লিগ্যাল এইড কর্নার উদ্বোধন করা হয়।

এ ছাড়া বিগত ১১-১০-২০২৩ খ্রি. তারিখে কারাগারের অভ্যন্তরে অবস্থানরত কারাবন্দিদের স্মার্ট আইনি সেবা সহজীকরণ শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়, যাতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সিনিয়র সহকারী জজ মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল।

জেলা লিগ্যাল কমিটি চট্টগ্রাম কর্তৃক জেলা পরিষদ চট্টগ্রামের আর্থিক সহায়তায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের কার্যালয়ে বিগত ০১-০৪-২০১৪ খ্রি. অরিখে চট্টগ্রামের সম্মানিত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এবং সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমদ ভূঞা, নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুরাদ-এ-মাওলা সোহেল, বিজ্ঞ জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বিজ্ঞ মহানগর পিপি মো. আব্দুর রশিদ, বিজ্ঞ সরকারি কৌঁশুলি (জিপি) জনাব নাজমুল আহসান খানের উপস্থিতিতে স্মার্ট মেডিয়েশন রুমের শুভ উদ্বোধন করা হয়। স্মার্ট মেডিয়েশন রুমে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার কর্তৃক বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা হচ্ছে।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি চট্টগ্রাম কর্তৃক বিগত ২১ নভেম্বর ২০২০৩ খ্রিস্টাব্দ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে লাখো হতদরিদ্র সহায়-সম্বলহীন বিচারপ্রার্থী মানুষ এবং যাঁরা এসব অসহায় মানুষের আইনগত সহায়তা প্রাপ্তিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁদের উত্সর্গ করে আইন বিষয়ক সচেতনতামূলক ‘কর্ণফুলী’ শীর্ষক একটি জার্নাল প্রকাশ করেন, যাতে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সম্মানিত সদস্যদের আইন ও বিচারবিষয়ক গবেষণামূলক নিবন্ধ স্থান পেয়েছে।

চলতি বছর ‘স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৪ প্রতিপালিত হচ্ছে। লিগ্যাল এইড কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকভাবে সরকারের এই মহতি উদ্যোগকে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করলে এই কার্যক্রম তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে আশা করা যায়।

লেখক:  ড. আজিজ আহমদ ভূঞা, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং  চেয়ারম্যান জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি, চট্টগ্রাম


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002720832824707