নিজের বাড়িতে থেকে-খেয়ে পল্লী এলাকার দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা সচল রাখা এবং শিক্ষা র গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সরকারি কলেজবিহীন উপজেলাগুলোতে একটি করে কলেজ সরকারি করেছেন। গভর্নমেন্ট অর্ডার (জিও) জারির সঙ্গে সঙ্গে সরকারিকৃত কলেজগুলোর গর্ভনিং বডি বাতিল হয়ে গেছে এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে যৌথ স্বাক্ষরকারী মনোনীত করা হয়েছে। সরকারিকৃত কলেজগুলো চলছে একাডেমিক কাউন্সিলের ও শিক্ষক পরিষদের মতামতের ভিত্তিতে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সমন্বয় করে। কাজেই সরকারি হওয়ার পর তো কলেজগুলো এতিম হয়ে যায়নি যে, অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় গর্ভনিং বডি বাতিল করেছে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কোন ওহি নাজিল হলো যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদেশ জারি করতে হলো। সরকারি হওয়া কলেজগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তো মঙ্গল গ্রহের অধীন নয় যে, মঙ্গল গ্রহ থেকে আদেশ জারি করবেন আর প্রজারা তা মেনে নেবে! জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এটি দিবাস্বপ্ন।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ আগস্ট থেকে ৩০২টি এবং পরে আরো কয়েকটি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হামবড়া ভাব দেখিয়ে আজ পর্যন্ত ডিগ্রি, অনার্স এবং মাষ্টার্স পাশ করা শিক্ষার্থীদের সনদপত্র ও নম্বরপত্র দিচ্ছেন বেসরকারি কলেজের মত। কলেজগুলোতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দয়ায় সরকারি হয়নি। সরকারি হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায়। তাহলে সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীদের সনদপত্র ও নম্বরপত্রে কলেজের নামের সাথে সরকারি শব্দটি যুক্ত করতে আপত্তি কোথায়? শুধু তাই নয় ডিগ্রির তৃতীয় শিক্ষক এবং অনার্সের শিক্ষকদের এমপিও দেয়ার ক্ষেত্রেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাধা দিয়েছে। যা অমানবিক। তাহলে এসব শিক্ষক কি হাওয়া খেয়ে বাঁচবে? তার মানে হলো এদের হাত-পা বেঁধে পেটানো। অথচ এসব শিক্ষক ছাড়া আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্তি দেবে না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে মনে রাখতে হবে, কলেজগুলো আছে বলেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সাত কলেজের মত হয়ে গেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই থাকবে না। তখন কার ওপর নির্দেশ দেয়া হবে? এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশও রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করেই চলতে হয়। হঠাৎ করে কোন খায়েশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্দেশ দিতে হলো, তা ভূক্তভোগী কলেজগুলো
জানতে চায়। সেই সাথে এই স্বৈরতান্ত্রিক ও একনায়কতান্ত্রিক আদেশ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা সাত কলেজের মতো হতে চাইতেই পারি। তখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু বেসরকারি কলেজ নিয়েই চলতে হবে। কাজেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সবিনয়ে জানাচ্ছি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারবেন না।লেখক : মো. আবদুল লতিফ, অধ্যক্ষ, সরকারি ডা. জহরুল কামাল ডিগ্রি কলেজ, সুজানগর, পাবনা