জাবি ঘিরে মাসুদ রানার অপরাধ সাম্রাজ্য

দৈনিক শিক্ষাডটকম, জাবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, জাবি: দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। তবে বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গণমাধ্যমে শিরোনাম হতে হয়েছে এ ক্যাম্পাসকে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ক্যাম্পাসে অবাধ মাদকসেবন। মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠেছে জাবি ক্যাম্পাস। এই প্রতিষ্ঠান ঘিরে এবং একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র গড়ে উঠেছে। আর এই অপরাধ সাম্রাজ্যের নেতৃত্বে রয়েছেন সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মাসুদ রানাই মূলত জাবি ক্যাম্পাসে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক সরবরাহ করে থাকেন। এ ছাড়া  পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনেও মাসুদের নানান অপকর্মের ফিরিস্তি পাওয়া গেছে। ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের এক প্রতিবেদনে মাসুদকে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সিআইডির একটি তদন্তে মাসুদের বিরুদ্ধে জাল দলিল তৈরি করে জমি দখলের প্রমাণ মিলেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়াহাব আলী নামের এক ব্যক্তির ৪০ শতাংশ জমি জোর করে দখলে নিয়েছেন মাসুদ। এই মুক্তিযোদ্ধার বাসায় হামলা করে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার মালপত্র লুট করে নিয়ে যায় মাসুদ বাহিনী। এরপর উল্টো এই মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধেই দেওয়া হয় মামলা। ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা জমি ফিরে পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি।

ওয়াহাব আলী বলেন, ‘মাসুদ স্থানীয় অনেক মানুষের ক্ষতি করেছে। আমার জমি এখনো ফিরে পাইনি। বিষয়টি লিখিতভাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিচার চাইব।’

মাসুদ রানার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সাভারের পানধোয়া ইউনিয়ন, আমবাগান, সেনওয়ালীয়া ও গোকুল নগর এলাকা। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরা দিয়ে ঘেরা। এসব ক্যামেরায় নজরদারি করা হয় মাসুদের বাড়ি থেকে। এসব এলাকার ইন্টারনেট এবং ডিশের ব্যবসার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণও তার। তবে এসব ব্যবসার আড়ালে মাসুদ মূলত ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদকের কারবার করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মাদকের প্রধান সরবরাহকারী ছিলেন মো. মামুনুর রশিদ মামুন ও মাসুদ রানা। তবে স্বামীকে হলের কক্ষে আটকে রেখে বহিরাগত এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামুন গ্রেপ্তার হন। এরপর জাবিতে মাদকের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন মাসুদ রানা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্যাম্পাসে মাদকের মূল সাপ্লাইয়ার মাসুদ। তার কাছ থেকে আমাদের স্টুডেন্টরা ক্রয় করে সেবন ও বিক্রি করে। মাদক ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে সব অপকর্মের হোতা এই মাসুদ। জমি দখল, চাঁদাবাজির থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নেই, যা সে করে না। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে মাসুদ রানার সঙ্গে কয়েকদিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি।

জানতে চাইলে সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তাকে আমরা ধরে চালান দিয়েছি। এরপর সে জামিনে বের হলে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। অনেক সময় চালান দেওয়ার পরে সাক্ষী পাওয়া যায় না। এখন আইন তো আইনের গতিতে চলবে, সাক্ষী না পেলে সে জামিন পেয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক শ্রেণির উকিল মাদক কারবারিদের ছাড়াতে উদগ্রীব হয়ে থাকেন। আপনাদের উচিত তাদের বিরুদ্ধে লেখা।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024337768554688